বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবা খাতে আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে বিকাশ। এখন বিকাশ অ্যাপে সিটি ব্যাংক থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ডিজিটাল লোন নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বিকাশ গ্রাহকরা। যোগ্য গ্রাহকরা যেকোনো সময়, যেকোনো প্রয়োজনে মাত্র কয়েক ক্লিকে এই লোন পেতে পারেন, ব্যাংকে যাওয়া বা কাগজপত্র জমা দেওয়ার ঝামেলা ছাড়াই। বিকাশ এবং সিটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে ২০২১ সালে চালু হওয়া এই ডিজিটাল লোন সেবা ইতিমধ্যে গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
লোনের সীমা বৃদ্ধি: ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা
এতদিন বিকাশ অ্যাপে ডিজিটাল লোনের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৩০,০০০ টাকা। তবে গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, আস্থা এবং দ্রুত ঋণ প্রাপ্তির সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে এই সীমা বাড়িয়ে ৫০,০০০ টাকা করা হয়েছে। এই সেবা চালুর পর থেকে প্রায় ১০ লাখ গ্রাহক ৫৫ লাখ বারের বেশি লোন নিয়েছেন, যার মোট পরিমাণ প্রায় ২,৮০০ কোটি টাকা। এটি দেশের ফিনটেক খাতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
বিকাশ ডিজিটাল লোনের সুবিধাসমূহ
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল লোন সেবা গ্রাহকদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা নিয়ে এসেছে:
- জামানতবিহীন লোন: কোনো সম্পত্তি বা গ্যারান্টারের প্রয়োজন নেই।
- তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি: মাত্র কয়েক ক্লিকে ৫০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন সরাসরি বিকাশ অ্যাকাউন্টে।
- কাগজপত্রের ঝামেলা নেই: ব্যাংকে যাওয়া বা কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
- নমনীয় মেয়াদ: সর্বোচ্চ ৬ মাসের মেয়াদে লোন পরিশোধের সুযোগ।
- অগ্রিম পরিশোধের সুবিধা: মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আংশিক বা পুরো লোন পরিশোধ করা যায়, কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই।
কীভাবে বিকাশ অ্যাপে লোন নেবেন?
বিকাশ অ্যাপে সিটি ব্যাংক থেকে ডিজিটাল লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ:
- লোন আইকনে ট্যাপ: বিকাশ অ্যাপে প্রবেশ করে ‘লোন’ আইকনে ক্লিক করুন।
- লোনের পরিমাণ নির্বাচন: সিটি ব্যাংকের অনুমোদিত সীমার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত লোনের পরিমাণ লিখুন।
- শর্তাবলী সম্মতি: শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ে সম্মতি দিন।
- পিন প্রদান: বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন দিয়ে নিশ্চিত করুন।
- তাৎক্ষণিক টাকা জমা: ট্যাপ করে ধরে রাখলেই লোনের টাকা তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
লোন পরিশোধ পদ্ধতি
- মাসিক কিস্তি: লোনের ধরন অনুযায়ী মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত তারিখে কিস্তির টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে।
- অগ্রিম পরিশোধ: গ্রাহক চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আংশিক বা সম্পূর্ণ লোন পরিশোধ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শু�only ব্যবহারকৃত সময়ের জন্য ইন্টারেস্ট প্রযোজ্য হবে, এবং অগ্রিম পরিশোধে কোনো অতিরিক্ত চার্জ নেই।
কারা লোন পাবেন?
বিকাশ অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের লেনদেনের ইতিহাস এবং সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লোনের যোগ্যতা ও পরিমাণ নির্ধারিত হয়। যারা এখনো এই সেবার আওতায় আসেননি, তারা নিয়মিত বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে—যেমন অ্যাড মানি, সেভিংস, পেমেন্ট ইত্যাদি সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে লোন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।
ডিজিটাল লোনের প্রভাব
বিকাশ এবং সিটি ব্যাংকের এই উদ্যোগ দেশের ফিনটেক খাতে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই সেবার মাধ্যমে:
- আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: গ্রামীণ ও শহুরে গ্রাহকরা সহজেই ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন।
- দ্রুত সেবা: কাগজপত্রবিহীন তাৎক্ষণিক লোন প্রক্রিয়া সময় ও ঝামেলা কমিয়েছে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ছোট উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে লোন ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ডিজিটাল লোন সেবা বাংলাদেশের নোটবিহীন অর্থনীতি এবং আর্থিক প্রযুক্তি খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
- যোগ্যতার সীমাবদ্ধতা: সকল গ্রাহক স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোনের জন্য যোগ্য নাও হতে পারেন, কারণ এটি লেনদেনের ইতিহাস ও ক্রেডিট স্কোরের উপর নির্ভর করে।
- ইন্টারেস্ট রেট: লোনের ধরন অনুযায়ী ইন্টারেস্ট রেট প্রযোজ্য হতে পারে, যা গ্রাহকদের বিবেচনা করা উচিত।
- অ্যাকাউন্ট নিরাপত্তা: বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন এবং লেনদেনের তথ্য সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
বিকাশ এবং সিটি ব্যাংকের এই জামানতবিহীন ডিজিটাল লোন সেবা বাংলাদেশের আর্থিক খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন সুবিধা গ্রাহকদের জন্য দ্রুত, সুবিধাজনক এবং নিরাপদ আর্থিক সমাধান নিয়ে এসেছে। নিয়মিত বিকাশ ব্যবহারকারীরা এই সেবার মাধ্যমে তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে পারবেন, যা দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।