দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়া, যাকে সবাই ‘রিপন ভিডিও’ নামে চেনেন, সম্প্রতি একটি টেলিভিশন প্রতিবেদনের কারণে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। তাঁর মায়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, রিপন তাঁদের ভরণপোষণ দেন না এবং স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করেছেন। এই খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ট্রলিং-এর ঝড় উঠেছে। কিন্তু এলাকাবাসীদের নতুন সাক্ষাৎকারে আসল ঘটনা বেরিয়ে এসেছে: রিপন মিয়া ভরণপোষণ দিতে চাইলেও পরিবার নিতে চায় না, এবং তাঁকে অনেক আগেই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানবো পুরো ঘটনাপ্রবাহ, এলাকাবাসীদের কথা এবং রিপনের বর্তমান অবস্থান।
রিপন মিয়া কে? এক নজির কনটেন্ট ক্রিয়েটরের উত্থান
নেত্রকোণা সদরের দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন মিয়া (পুরো নাম: এমডি রিপন মিয়া) পেশায় রাজমিস্ত্রি। ২০১৬ সাল থেকে ফেসবুকে ছোট ছোট মজার ভিডিও তৈরি শুরু করেন তিনি। তাঁর স্বাক্ষরিক সংলাপ ‘হাই আই অ্যাম রিপন ভিডিও’ এবং ‘আই লাভ ইউ, এটাই বাস্তব’ দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। বর্তমানে ফেসবুকে ১৮ লাখের বেশি ফলোয়ার এবং ইউটিউবে কোটি কোটি ভিউ। বিজ্ঞাপন থেকে সিনেমা প্রমোশন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে তিনি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরে পরিণত হয়েছেন।
কিন্তু সাফল্যের পথ সহজ ছিল না। প্রেমে ব্যর্থতার পর ভিডিও তৈরি করে তিনি নিজেকে সামলে নেন। এক মিডিয়া ম্যানেজারের সাহায্যে তাঁর ক্যারিয়ার নতুন করে গড়ে ওঠে। এমনকি গত বছরের রাজনৈটিক ঘটনাবলীর সময় তাঁর একটি ভিডিও (এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দিকে উদ্দেশ্য করে) ভাইরাল হয়ে যায়। রিপনের কনটেন্টের সাধারণতা: গ্রামীণ জীবন, হাস্যরস এবং আন্তরিকতা – যা লাখো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
গতকাল (১৪ অক্টোবর ২০২৫) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রিপনের মা দাবি করেন, তাঁরা পুরোনো ভাঙা বাড়িতে থাকেন যেখানে রিপন নতুন পাকা বাড়ি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা হয়ে গেছেন। ছেলে কোনো ভরণপোষণ দেন না। এছাড়া প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, রিপন স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করেছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলিং শুরু হয়। অনেকে রিপনের পুরোনো বক্তব্য (পরিবারের প্রতি ভালোবাসা) নিয়ে তাঁকে নিয়ে মিম তৈরি করেন।
রিপনের বাবাও প্রতিবেদনে বলেন, ছেলেরা খোঁজ নেয় কিন্তু আর্থিক সাহায্য করে না। তবে একটি নতুন সাক্ষাৎকারে তিনি যোগ করেন, তিন ছেলের মধ্যে যারা পারে সাহায্য করে, এবং তাঁর নিজের আয় দিয়ে সংসার চলে।
এলাকাবাসীদের নতুন তথ্য: আসল ঘটনা কী?
টেলিভিশন প্রতিবেদনের পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘ট্যুডে সি নিউজ’ নামক একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রিপনের এলাকাবাসীদের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসে একটি ভিন্ন চিত্র:
| সাক্ষী | তাদের দাবি | বিস্তারিত |
|---|---|---|
| প্রতিবেশী মরিয়ম | রিপনকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে | জনপ্রিয় হওয়ার আগে রিপন কাজ করতেন না বলে মা-বাবা তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এখন কনটেন্ট থেকে আয় করে জমি কিনে পাকা বাড়ি তৈরি করছেন। |
| চাচাতো বোন (নাম প্রকাশ করেননি) | পরিবার রিপনকে আশ্রয় দেয় না | ছোট থেকেই রিপনকে বাড়িতে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। বাড়ি এলে দৌড়ানি দেন। তিন ভাই সবাই বাড়িছাড়া। রিপন সাহায্য দিতে চাইলেও মা-বাবা নেন না। স্ত্রী-সন্তান অস্বীকারের কথা হয়তো ভাইরাল হওয়ার জন্য বলা। |
| অন্যান্য এলাকাবাসী | রিপন সৎ এবং ভালো মানুষ | তাঁরা রিপনকে সৎ হিসেবে চেনেন। ভরণপোষণ দিতে চাইলেও পরিবার নিতে চায় না। তবে স্ত্রী-সন্তান অস্বীকার রিপনের উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। |
এই সাক্ষাৎকারগুলোতে স্পষ্ট যে, রিপনের সাফল্যের পর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীরা বলছেন, রিপনের আয়ের টাকা দিয়ে তিনি নিজের জন্য জমি কিনে বাড়ি তৈরি করছেন, কিন্তু পরিবারের জন্যও চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেদনের পর রিপন মায়ের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “তোমারে দেহি না আমি?” – এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি সবসময় পরিবার দেখে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও দেখব। যদি কোনো ঘাটতি থাকে, তা পূরণ করব। কিন্তু যারা আমার সরল বাবা-মাকে নিয়ে ব্যবসা করেছে, তাদের বিচার হবে।”
এক সাক্ষাৎকারে রিপন যোগ করেন, “কিছু বিষয় সরাসরি বলা যায় না, বুঝে নিতে হয়। ভাইরাল হওয়ার পর টাকা এসেছে, তখন থেকে ঝামেলা শুরু। একজন দুই কোটি টাকার অফার দিয়েছিল কাজ করার জন্য।” তিনি এখন নতুন বাড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত, যেখানে পরিবারের জন্যও জায়গা রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকদের বাড়িতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশের অভিযোগও তুলেছেন রিপন। এতে সালমান মুক্তাদিরসহ অনেকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথমে ট্রলিং হলেও এলাকাবাসীদের সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর সমর্থন বাড়ছে। X (পূর্বের টুইটার)-এ ‘রিপন মিয়া নতুন তথ্য’ ট্রেন্ড করছে। অনেকে বলছেন, “পরিবারের ঝগড়া মিডিয়ায় নিয়ে আসা অন্যায়।” রিপনের ফেসবুক পেজে লাইভ আপডেট চলছে, যেখানে তিনি বলেন, “আমি ঝগড়া করি না, কিন্তু সত্য বলব।”
রিপন মিয়ার এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, সাফল্যের সাথে পরিবারের সম্পর্ক কতটা জটিল হতে পারে। এলাকাবাসীদের কথা থেকে বোঝা যায়, অভিযোগের পেছনে গভীর কারণ রয়েছে – যেমন বাড়িছাড়া হওয়া এবং সাহায্য না নেওয়া। তবে স্ত্রী-সন্তানের বিষয়ে রিপনের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
সোর্স: সাম্প্রতিক নিউজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট।

