রমজান মাস হলো মুসলমানদের পবিত্র মাস, যেখানে ইবাদতের ফজিলত অনেক বেশি। এই মাসে তারাবির নামাজ হলো একটি বিশেষ সুন্নত, যা রমজানের রাতে ঈশা নামাজের পর আদায় করা হয়। এই নামাজটি মূলত জামাতে পড়া হয়, এবং এতে মহিলাদেরও অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে মহিলাদের জন্য এই নামাজের কিছু নিয়ম-কানুন আলাদা। আসুন জেনে নিই তারাবির নামাজের নিয়ম, কানুন এবং মহিলাদের জন্য বিশেষ দিকগুলো।
তারাবির নামাজ কী?
তারাবির নামাজ হলো রমজান মাসের রাতে আদায় করা বিশেষ সুন্নত নামাজ। এটি ঈশা নামাজের পর আদায় করা হয় এবং এতে দীর্ঘ কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে। "তারাবি" শব্দের অর্থ হলো "বিশ্রাম", কারণ প্রতি ৪ রাকআত পর বিশ্রাম নেওয়া হয়।
তারাবির নামাজের সময়
তারাবির নামাজ ঈশা নামাজের পর শুরু হয়। এটি রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ বা মধ্যভাগে আদায় করা হয়। মসজিদে জামাতে পড়া হলে এটি আরো বরকতপূর্ণ হয়।
তারাবির নামাজের নিয়ম ও কানুন
১. তারাবির নামাজের রাকআত:
- তারাবির নামাজের জন্য মোট ২০ রাকআত পড়া হয় (হানাফি মাজহাব অনুযায়ী)।
- কিছু মাজহাবে ৮ রাকআত পড়া হয়।
- প্রতি ৪ রাকআত পর বিশ্রাম নেওয়া হয়।
২. মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজের নিয়ম:
- মসজিদে নামাজ: মহিলারা মসজিদে তারাবির নামাজে অংশ নিতে পারেন, তবে পর্দা বজায় রাখতে হবে।
- বাড়িতে নামাজ: মহিলারা বাড়িতে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারেন। এক্ষেত্রে জামাত ছাড়াও নামাজ পড়া যায়।
- পোশাক: মহিলাদের নামাজের সময় সঠিক পর্দা নিশ্চিত করতে হবে। শরীরের কোনো অংশ খোলা থাকা যাবে না।
৩. নামাজের প্রস্তুতি:
- ওযু: নামাজের আগে যথাযথ ওযু করা জরুরি।
- তাহারাত: মহিলারা মাসিক বা নফসির অবস্থায় থাকলে তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন না।
- সাহরি ও ইফতার: রোজা রাখার জন্য সাহরি ও ইফতার করা জরুরি, যাতে নামাজে শরীরের শক্তি বজায় থাকে।
তারাবির নামাজের নিয়ত
নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করতে হবে। নিয়তটি হলো:
আরবিতে:
"نويت أن أصلي سنة التراويح لله تعالى"
(উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আসলি সুননাতাত-তারাওইহি লিল্লাহি তাআলা)
(অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য তারাবি নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।)বাংলায়:
"আমি আল্লাহর জন্য তারাবি নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।"
তারাবির নামাজের দোয়া
তারাবির নামাজের পর মুনাজাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তবে গোনাহমুক্ত জীবন লাভে তাওবা-ইসতেগফার করা জরুরি। একটি বহুল প্রচলিত দোয়া হলো:
আরবিতে:
"سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ..."
(উচ্চারণ: সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি...)অর্থ:
"সৃষ্টিকর্তার পবিত্রতা যিনি রাজত্ব ও রাজ্যের মালিক, যিনি শক্তিশালী ও মহান..."
তারাবির নামাজের ইতিহাস
উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের এবং মহিলাদের তারাবি কত রাকাত? জানিয়েছি চলুন এখন তারাবির নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে জানি। তারাবির নামাজের ইতিহাস ইসলামের প্রাথমিক যুগের সঙ্গে যুক্ত। এটি রমজান মাসের বিশেষ একটি নামাজ, যা রাতে আদায় করা হয়।
“তারাবি” শব্দটি আরবি “تراويح” থেকে এসেছে, যার অর্থ “বিশ্রাম নেওয়া” বা “বিশ্রাম করে নামাজ পড়া”। এই নামাজে সাধারণত দীর্ঘ রাকআত হয়, এবং একেকটি রাকআতের মধ্যে ছোট-বড় সূরা পড়া হয়। এটি মূলত রমজান মাসের রাতগুলোতে আল্লাহর কাছে দোয়া, তিলাওয়াত এবং ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে আদায় করা হয়।
তারাবির নামাজের ইতিহাস নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
শুরুঃ তারাবির নামাজের শুরু হয়েছিল প্রাথমিক ইসলামিক যুগে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথম রমজান মাসে মসজিদে কিছু দিন তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করেছিলেন। প্রথম দিকে তিনি সবাইকে জামাতে তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে, কয়েকদিন পর তিনি তা বন্ধ করে দেন। কারণ, তিনি চিন্তা করেছিলেন যে, যদি এর পরিণতি ফরজ নামাজের মতো হয়ে যায়, তবে মুসলিমরা তা পালন করতে বাধ্য হবে। তবে, তিনি কখনোই তারাবির নামাজের গুরুত্ব অস্বীকার করেননি এবং বলেছেন যে এটি একটি ঐচ্ছিক সুন্নত নামাজ।
ঐতিহ্যঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর, তারাবির নামাজ মুসলিম সমাজে একটি প্রথা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হযরত ওমর (রা.) তার খিলাফতকালে এটি পুনরায় জামাতে পড়ানোর ব্যবস্থা করেন, এবং তখন থেকে এটি মুসলিম সমাজে প্রচলিত ইবাদত হয়ে ওঠে। হযরত ওমর (রা.) এর সময় মসজিদে ইমাম দ্বারা তারাবির নামাজ জামাতে পড়ানো শুরু হয় এবং এটি ২০ রাকআত পর্যন্ত পড়া হত।
বর্তমানকালেঃ বর্তমানে, অনেক মুসলিম দেশে তারাবির নামাজে ৮ বা ২০ রাকআত পড়া হয়। এটি মসজিদে জামাতে অথবা বাড়িতে একা পড়া যেতে পারে। তারাবির নামাজের ফজিলত ও বরকত প্রতিটি মুসলমানের জীবনে বিশেষ একটি মুহূর্ত এনে দেয়, কারণ এটি রমজান মাসের মধ্যে এক বিশেষ ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ প্রদান করে।
তারাবির নামাজ ইসলামিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অংশ, যা রমজান মাসের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে আরও গভীর করে। এটি মুমিনদের একত্রিত হওয়ার, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার এবং কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রুহানী উৎকর্ষ লাভ করার একটি মাধ্যম।
তারাবির নামাজ সম্পর্কে শেষ মতামত
তারাবির নামাজ পুরুষদের জন্য যেমন সুন্নত তেমনি মহিলাদের জন্য সুন্নত। কেননা শরীয়তের সমস্ত ব্যাপারে মহিলাদেরকে পুরুষদের অধীনে করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে পুরুষদের উপর যেমন তারাবির নামাজ সুন্নত মুয়াক্কাদা ঠিক তেমনি মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
তাও কেউ যদি মনে করে, মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ পড়তে হবে না তাহলে এটা ভুল ধারণা। মা-বোনরা চাইলে জামাতের সাথে এই নামাজ পড়তে পারে। এই ক্ষেত্রে কোন একজন পুরুষ ইমামতি করবে এবং মহিলা পর্দা সহকারে থাকবে।
আশা করি আপনি আমাদের পোস্টটি পড়ে মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে পোষ্টটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে পারবে।