কুরবানির নিসাবে এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি? ২০২৫ গাইড
কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর ওয়াজিব। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, কুরবানির নিসাবে গচ্ছিত সম্পদ এক বছর ধরে থাকা জরুরি কি? অথবা, যদি কারো কাছে শুধু ৬০,০০০ টাকা থাকে এবং অন্য কোনো সম্পদ না থাকে, তাহলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে কি? এই গাইডে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর ইসলামিক বিধান ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কুরবানির নিসাবে এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি কি?
জাকাতের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর ধরে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কুরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে এক বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের মধ্যে যেকোনো সময় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। (আহসানুল ফাতাওয়া: ৭/৫০৬)
অর্থাৎ, সম্পদ বছরব্যাপী থাকুক বা না থাকুক, কুরবানির সময়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কুরবানি করা ফরজ।
৬০,০০০ টাকা থাকলে কুরবানি ওয়াজিব হবে?
কুরবানির নিসাব নির্ধারণের জন্য সম্পদের পরিমাণ হিসাব করা হয়। নিসাবের পরিমাণ হলো:
- স্বর্ণ: সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি।
- রুপা: সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি।
- টাকা বা অন্যান্য সম্পদ: সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্যের সমপরিমাণ।
যদি কারো কাছে শুধু ৬০,০০০ টাকা থাকে এবং অন্য কোনো সম্পদ (যেমন: জমি, স্বর্ণ, ব্যবসায়িক পণ্য) না থাকে, তবে তাকে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার বাজার মূল্য জানতে হবে। ২০২৫ সালে রুপার মূল্যের উপর ভিত্তি করে হিসাব করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ৫২.৫ ভরি রুপার মূল্য ৬০,০০০ টাকার কম হয়, তাহলে কুরবানি ওয়াজিব হবে না। কিন্তু যদি এই পরিমাণ টাকা রুপার মূল্যের সমান বা বেশি হয়, তাহলে কুরবানি ওয়াজিব হবে।
প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ: কুরবানির নিসাব হিসাবে শুধুমাত্র প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ গণনা করা হয়। এর মধ্যে টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রুপা, অপ্রয়োজনীয় জমি, বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য বা আসবাবপত্র অন্তর্ভুক্ত।
কুরবানির সময় ও শর্ত
কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত:
- প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী।
- জিলহজের ১০ তারিখ ফজর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের মধ্যে নিসাব পরিমাণ প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদের মালিক।
কুরবানির সময়: কুরবানি জিলহজের ১০, ১১, এবং ১২ তারিখে করা যায়। এই সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কুরবানি ফরজ।
কুরবানির গুরুত্ব
কুরবানি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। হাদিসে এসেছে, কুরবানির দিনের আমলগুলোর মধ্যে পশু কুরবানি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। (জামে তিরমিজি: ১৪৯৩)। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি না করার জন্য কঠোর ধমকি দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যার কুরবানির সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ: ২/৩২১)
নিসাব হিসাবের উদাহরণ
ধরা যাক, ২০২৫ সালে ৫২.৫ ভরি রুপার বাজার মূল্য প্রায় ৫৫,০০০ টাকা। যদি কারো কাছে ৬০,০০০ টাকা থাকে এবং এটি তাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ হয়, তাহলে তাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। তবে, সঠিক হিসাবের জন্য বাজারে রুপার বর্তমান মূল্য জানা জরুরি।
যদি একাধিক ধরনের সম্পদ (যেমন: টাকা, স্বর্ণ, ব্যবসায়িক পণ্য) থাকে এবং সব মিলিয়ে ৫২.৫ ভরি রুপার মূল্যের সমান হয়, তাহলেও কুরবানি ওয়াজিব।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
- প্রশ্ন: কুরবানির নিসাবে এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি কি?
উত্তর: না, জিলহজের ১০-১২ তারিখে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব। - প্রশ্ন: ৬০,০০০ টাকা থাকলে কুরবানি ওয়াজিব হবে?
উত্তর: যদি ৫২.৫ ভরি রুপার মূল্য ৬০,০০০ টাকার কম হয়, তবে ওয়াজিব হবে না। - প্রশ্ন: কুরবানির নিসাব কী?
উত্তর: স্বর্ণে ৭.৫ ভরি, রুপায় ৫২.৫ ভরি, বা এর সমমূল্যের টাকা/সম্পদ। - প্রশ্ন: কুরবানি কখন করতে হয়?
উত্তর: জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে।
কুরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়। জিলহজের ১০-১২ তারিখের মধ্যে নিসাব পরিমাণ প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব। ৬০,০০০ টাকার ক্ষেত্রে, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার বাজার মূল্যের সাথে তুলনা করে নিশ্চিত করুন। এই গাইড অনুসরণ করে ২০২৫ সালে কুরবানির বিধান সঠিকভাবে পালন করুন।