পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যায়?

Avatar

Published on:

পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যায়?
পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যায়?


পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যায়? ২০২৫ গাইড

পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যায়? ২০২৫ গাইড

কুরবানি ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত, যা সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর ওয়াজিব। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “অতএব, আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি আদায় করুন।” (সূরা কাউসার: ২)। এই গাইডে আমরা আলোচনা করব, পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যায় কিনা, কুরবানির নেসাব, শর্ত এবং ইসলামিক বিধান সম্পর্কে।

কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

কুরবানি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি উপায়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“কুরবানির দিনের আমলগুলোর মধ্যে পশু কুরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এ কুরবানিকে তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কুরবানি কর।” (জামে তিরমিজি: ১৪৯৩)

যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করেন না, তাদের ব্যাপারে কঠোর ধমকি এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যার কুরবানির সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ: ২/৩২১; মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৬৩৯)

পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যায় কি?

ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, পরিবারের সবার পক্ষে একটি পশু কুরবানি করা যথেষ্ট নয় যদি পরিবারের একাধিক সদস্যের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়। একান্নভুক্ত পরিবারে প্রত্যেক সদস্য যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তবে তাদের প্রত্যেকের জন্য পৃথকভাবে কুরবানি করা আবশ্যক।

  • প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি ছোট পশু (যেমন: ছাগল) বা বড় পশুতে (যেমন: গরু, উট) একটি অংশ কুরবানি দিতে হবে।
  • একটি কুরবানি পুরো পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে না যদি একাধিক সদস্যের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়।

কুরবানির নেসাব কী?

কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা আবশ্যক। নেসাব হলো:

  • স্বর্ণ: সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি।
  • রুপা: সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি।
  • টাকা-পয়সা বা অন্যান্য সম্পদ: সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ।

প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদের মধ্যে হিসাবযোগ্য:

  • টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলংকার।
  • বসবাস বা খোরাকির জন্য অপ্রয়োজনীয় জমি বা বাড়ি।
  • ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।

যদি কোনো ব্যক্তির কাছে স্বর্ণ, রুপা বা টাকা পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু সব মিলিয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমান হয়, তাহলেও কুরবানি ওয়াজিব।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কুরবানির নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়। ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের মধ্যে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬)

কাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব?

কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত:

  • প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী।
  • ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে নেসাব পরিমাণ প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদের মালিক।

পরিবারের জন্য কুরবানির বিধান

যদি এক পরিবারে একাধিক সদস্যের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়, তবে:

  • প্রত্যেকের জন্য পৃথক কুরবানি আবশ্যক।
  • ছোট পশু (ছাগল, ভেড়া) একজনের জন্য, আর বড় পশু (গরু, উট) সর্বোচ্চ সাতজনের জন্য শেয়ার করা যায়।
  • একটি ছোট পশু পুরো পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয় যদি একাধিক সদস্য নেসাবের মালিক হন।

কুরবানির সময় ও নিয়ম

কুরবানির সময়:

  • ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
  • কুরবানির পশু জবাইয়ের সময় সঠিক ইসলামিক নিয়ম মেনে চলতে হবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

  • প্রশ্ন: পরিবারের সবার জন্য একটি পশু কুরবানি যথেষ্ট কি?
    উত্তর: না, যদি একাধিক সদস্য নেসাবের মালিক হন, তবে প্রত্যেকের জন্য পৃথক কুরবানি আবশ্যক।
  • প্রশ্ন: কুরবানির নেসাব কী?
    উত্তর: স্বর্ণে ৭.৫ ভরি, রুপায় ৫২.৫ ভরি, বা এর সমমূল্যের সম্পদ।
  • প্রশ্ন: কুরবানি কখন ওয়াজিব হয়?
    উত্তর: ১০-১২ জিলহজের মধ্যে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে।
  • প্রশ্ন: বড় পশুতে কয়জন শেয়ার করতে পারে?
    উত্তর: সর্বোচ্চ সাতজন।

কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এবং পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তবে তাদের জন্য পৃথকভাবে কুরবানি করা ওয়াজিব। একটি পশু দিয়ে পুরো পরিবারের কুরবানি আদায় সম্ভব নয় যদি একাধিক সদস্যের ওপর কুরবানি ফরজ হয়। এই গাইড অনুসরণ করে আপনি ২০২৫ সালে কুরবানির বিধান সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন।

Related Posts

সঙ্গে থাকুন ➥