গ্রীষ্মের তীব্র গরমে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এখন ঘরে ঘরে স্বস্তির প্রতীক। কিন্তু ঠাণ্ডা বাতাসের পাশাপাশি মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চিন্তা অনেকেরই। বিশেষ করে, এসি দিনে ৮ ঘণ্টা চালালে মাসে বিদ্যুৎ খরচ কত হবে, তা জানা জরুরি। এই আর্টিকেলে আমরা ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার এসির বিদ্যুৎ খরচ, বিল হিসাব, এসি কেনার টিপস, এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এসির বিদ্যুৎ খরচ কীভাবে হিসাব করবেন?
একটি ১ টনের এসি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা চালালে মাসে (৩০ দিন) মোট ২৪০ ঘণ্টা চলে। এসির ধরন (ইনভার্টার বা নন-ইনভার্টার) এবং এর স্টার রেটিং অনুযায়ী বিদ্যুৎ খরচ ভিন্ন হয়। বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় মূল্য প্রায় ৭.৫ টাকা (২০২৫ সালের হিসাবে)। নিচে দুই ধরনের এসির খরচের হিসাব দেওয়া হলো:
১. ইনভার্টার ফাইভ স্টার এসি
- বিদ্যুৎ খরচ: প্রায় ১৬৫–১৭০ ইউনিট/মাস (২৪০ ঘণ্টা চালালে)।
- বিলের হিসাব: ১৬৫ × ৭.৫ = ১,২৩৭.৫০ টাকা (প্রায়)।
- সুবিধা: ইনভার্টার প্রযুক্তি কম্প্রেসারের গতি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।
২. নন-ইনভার্টার থ্রি স্টার এসি
- বিদ্যুৎ খরচ: প্রায় ২৪০ ইউনিট/মাস (২৪০ ঘণ্টা চালালে)।
- বিলের হিসাব: ২৪০ × ৭.৫ = ১,৮০০ টাকা (প্রায়)।
- সীমাবদ্ধতা: কম্প্রেসার বারবার চালু-বন্ধ হয়, ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেশি।
এসি কেনার সময় কী বিবেচনা করবেন?
এসি কেনার সময় শুধু দাম, ব্র্যান্ড, বা ক্যাপাসিটি (টন) নয়, বিদ্যুৎ খরচের দিকেও নজর দিন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:
- স্টার রেটিং: ফাইভ স্টার রেটিংযুক্ত এসি বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। তিন স্টারের তুলনায় এগুলো দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।
- ইনভার্টার প্রযুক্তি: ইনভার্টার এসি কম্প্রেসারের গতি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ খরচ ৩০-৫০% কমায়।
- রুমের আকার: ১২০-১৫০ বর্গফুট রুমের জন্য ১ টনের এসি যথেষ্ট। বড় রুমে বেশি ক্যাপাসিটির এসি লাগবে।
- ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতা: গ্রী, ওয়ালটন, স্যামসাং, এলজি ইত্যাদি ব্র্যান্ড বাংলাদেশে জনপ্রিয় এবং ভালো সার্ভিস দেয়।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর সহজ উপায়
এসির বিদ্যুৎ খরচ কমাতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলুন:
- ইনভার্টার এসি বেছে নিন: দীর্ঘমেয়াদে এটি খরচ কমাবে।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: এসির তাপমাত্রা ২৫–২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখুন। প্রতি ডিগ্রি কমানোতে বিদ্যুৎ খরচ ৬% বাড়ে।
- রুম সিল করুন: দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন যেন ঠাণ্ডা বাতাস বাইরে না যায়।
- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ: এসির ফিল্টার পরিষ্কার করুন এবং সার্ভিসিং করান। নোংরা ফিল্টার বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায়।
- টাইমার ব্যবহার: রাতে ঘুমানোর সময় টাইমার সেট করে এসি বন্ধ করুন।
ইনভার্টার বনাম নন-ইনভার্টার এসি: কোনটি ভালো?
বৈশিষ্ট্য | ইনভার্টার এসি | নন-ইনভার্টার এসি |
---|---|---|
বিদ্যুৎ খরচ | কম (১৬৫–১৭০ ইউনিট/মাস) | বেশি (২৪০ ইউনিট/মাস) |
দাম | তুলনামূলক বেশি | কম |
দীর্ঘমেয়াদি সাশ্রয় | বেশি | কম |
শব্দ | কম | বেশি |
ইনভার্টার এসি প্রাথমিকভাবে বেশি দামি হলেও বিদ্যুৎ বিলে সাশ্রয়ের কারণে ২-৩ বছরে খরচ পুষিয়ে নেয়।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিলের হিসাব পদ্ধতি
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিল গণনা করা হয় স্ল্যাব সিস্টেমে। প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিটের দাম সাধারণত ৭.৫–৮ টাকা। পোস্টপেইড মিটারে খরচ বাড়তে পারে, কারণ:
- ০–৫০ ইউনিট: ৪.৫০ টাকা/ইউনিট
- ৫১–২০০ ইউনিট: ৬.৫০ টাকা/ইউনিট
- ২০১–৩০০ ইউনিট: ৮.৫০ টাকা/ইউনিট
- ৩০১+ ইউনিট: ৯.৫০ টাকা/ইউনিট
এসির ব্যবহারে মাসে ২০০ ইউনিটের বেশি খরচ হলে বিল বেশি আসতে পারে। তাই ইনভার্টার এসি ব্যবহার করলে স্ল্যাবের উচ্চ হার এড়ানো সম্ভব।
উপসংহার
গরমে এসি আরাম দেয়, কিন্তু বিদ্যুৎ বিল নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। দিনে ৮ ঘণ্টা একটি ১ টনের ইনভার্টার ফাইভ স্টার এসি চালালে মাসে প্রায় ১,২৩৭ টাকা এবং নন-ইনভার্টার থ্রি স্টার এসি চালালে প্রায় ১,৮০০ টাকা খরচ হয়। ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি কিনে এবং ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারেন। এসি কেনার আগে স্টার রেটিং, রুমের আকার, এবং ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতা বিবেচনা করুন। এই সহজ পদক্ষেপগুলো আপনার গরমের আরামকে বাজেট-বান্ধব করে তুলবে!