Fiber Optic Drone: রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে কেন এত মারাত্মক ফাইবার অপটিক ড্রোন নতুন অস্ত্র?

Avatar

Published on:

Fiber Optic Drone: রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে কেন এত মারাত্মক ফাইবার অপটিক ড্রোন নতুন অস্ত্র?

১০০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন নতুন সামরিক প্রযুক্তির ব্যবহার যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দিচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত অস্ত্র হলো ফাইবার অপটিক ড্রোন, যা রাশিয়া এবং সম্প্রতি ইউক্রেন উভয়ই যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। এই ড্রোনগুলো জ্যামিং-প্রতিরোধী এবং রাডারে ধরা পড়ে না, যা এদেরকে অত্যন্ত মারাত্মক করে তুলেছে। এই নিবন্ধে আমরা ফাইবার অপটিক ড্রোনের কার্যপ্রণালী, সুবিধা, দুর্বলতা এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ফাইবার অপটিক ড্রোন কী?

ফাইবার অপটিক ড্রোন হলো এমন এক ধরনের ড্রোন, যা রেডিও সিগন্যালের পরিবর্তে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ড্রোনগুলো সাধারণত ছোট, ব্যাটারিচালিত এবং বিস্ফোরক বা ধারালো টাইটেনিয়াম ব্লেডে সজ্জিত। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ১০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহৃত হয়, যা ড্রোনের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ক্যাবলের মাধ্যমে পাইলট দূর থেকে ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করেন, যা উচ্চ-রেজোলিউশন ক্যামেরার সাহায্যে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে।

ফাইবার অপটিক ড্রোন কীভাবে কাজ করে?

ফাইবার অপটিক ড্রোনের কার্যপ্রণালী অত্যন্ত অনন্য এবং কার্যকর। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  1. রেডিও সাইলেন্স: এই ড্রোনগুলো কোনো রেডিও সিগন্যাল নির্গত করে না, কারণ এগুলো ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে শত্রুর রাডার বা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (EW) সিস্টেম এদের সনাক্ত করতে পারে না। এটি এদেরকে জ্যামিং-প্রতিরোধী করে তোলে।

  2. নির্ভুল আক্রমণ: ড্রোনের ক্যামেরা উচ্চ-রেজোলিউশন ভিডিও সরবরাহ করে, যা পাইলটদের সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে। এর ফলে সেনাঘাঁটি, গুরুত্বপূর্ণ ভবন বা সামরিক যানবাহনের উপর নির্ভুল আক্রমণ সম্ভব।

  3. বিস্ফোরণের ক্ষমতা: যদি কেউ ফাইবার অপটিক ক্যাবল কাটার চেষ্টা করে, তবে ড্রোনের ক্যামেরা তা সনাক্ত করে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এছাড়া, ড্রোনের ধারালো টাইটেনিয়াম ব্লেড কাছাকাছি কোনো ব্যক্তির জন্য মারাত্মক হতে পারে।

  4. নিঃশব্দ অপারেশন: এই ড্রোনগুলো কম উচ্চতায় ধীর গতিতে উড়ে, যা এদের সনাক্তকরণকে আরও কঠিন করে।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ফাইবার অপটিক ড্রোনের ব্যবহার

রাশিয়া প্রথমে এই ড্রোনগুলো নজরদারি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করলেও ২০২৪ সাল থেকে এগুলো আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যে ব্যবহার শুরু করে। ইউক্রেনের ছোট শহর, সেনাঘাঁটি, গুরুত্বপূর্ণ ভবন এবং সামরিক যানবাহন এই ড্রোনের প্রধান লক্ষ্য। মস্কোর এই কৌশল ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অপ্রস্তুত করে তুলেছে, কারণ এই ধরনের ড্রোন হামলা তারা আগে দেখেনি।

তবে ইউক্রেনও পিছিয়ে নেই। ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের ‘আনম্যানড সিস্টেম ব্যাটেলিয়ন’-এর টুয়েলভথ স্পেশাল ফোর্স ব্রিগেড সম্প্রতি ফাইবার অপটিক ড্রোন ব্যবহার করে রুশ সেনাদের উপর পাল্টা হামলা শুরু করেছে। এই প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

ফাইবার অপটিক ড্রোনের সুবিধা

ফাইবার অপটিক ড্রোনের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো:

  • জ্যামিং প্রতিরোধ: রেডিও সিগন্যালের পরিবর্তে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহারের ফলে এই ড্রোনগুলো ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের বিরুদ্ধে অকার্যকর।

  • রাডারে অদৃশ্য: কোনো রেডিও সিগন্যাল নির্গত না হওয়ায় এগুলো শত্রুর রাডারে ধরা পড়ে না।

  • নির্ভুলতা: উচ্চ-রেজোলিউশন ক্যামেরা এবং রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ড্রোন পাইলটরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।

  • নিরাপত্তা: ফাইবার ক্যাবল কাটার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণ ঘটে, যা শত্রুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

ফাইবার অপটিক ড্রোনের দুর্বলতা

যদিও এই ড্রোনগুলো অত্যন্ত কার্যকর, তবে এদের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে:

  • সীমিত পরিসর: ফাইবার অপটিক ক্যাবলের দৈর্ঘ্যের কারণে এই ড্রোনগুলো সর্বোচ্চ ১০-৪০ কিলোমিটার দূরত্বে কাজ করতে পারে।

  • ক্যাবলের ঝুঁকি: ক্যাবল গাছ বা অন্য বাধায় জড়িয়ে গেলে ড্রোনটি লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

  • কম উচ্চতা ও গতি: এই ড্রোনগুলো কম উচ্চতায় এবং ধীর গতিতে উড়ে, যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের দুর্বল করে তুলতে পারে।

  • শনাক্তকরণের সম্ভাবনা: যদিও রাডারে ধরা পড়ে না, শব্দ বা ইনফ্রারেড সনাক্তকরণের মাধ্যমে এদের অবস্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হতে পারে।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ফাইবার অপটিক ড্রোনের প্রভাব

ফাইবার অপটিক ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্রে একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রাশিয়ার এই প্রযুক্তি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, কারণ ঐতিহ্যগত মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এদের বিরুদ্ধে অকার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, কুর্স্ক অঞ্চলে এই ড্রোনগুলো পশ্চিমা সরবরাহকৃত সাঁজোয়া যানবাহন যেমন মার্ডার এবং স্ট্রাইকারের বিরুদ্ধে সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ইউক্রেনের পাল্টা ব্যবহারও যুদ্ধের গতিশীলতাকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ড এই প্রযুক্তি গ্রহণ করে রুশ সেনাদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, যা যুদ্ধে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে, এই ড্রোনের সীমিত পরিসর এবং ক্যাবলের দুর্বলতার কারণে উভয় পক্ষকেই কৌশলগতভাবে এদের ব্যবহার করতে হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ প্রভাব এবং সম্ভাবনা

ফাইবার অপটিক ড্রোনের উত্থান আধুনিক যুদ্ধের কৌশলকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এই ড্রোনগুলোর জ্যামিং-প্রতিরোধী এবং রাডারে অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা এদেরকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে, এদের সীমিত পরিসর এবং শনাক্তকরণের সম্ভাবনা ভবিষ্যতে নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে, যেমন শব্দ বা ইনফ্রারেড-ভিত্তিক সনাক্তকরণ সিস্টেম।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে এই ড্রোনগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে আরও উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উভয় পক্ষই গ্রহণ করতে পারে। এই প্রযুক্তির দ্রুত বিবর্তন যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা উভয়ই তৈরি করছে।

উপসংহার

ফাইবার অপটিক ড্রোন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একটি বিপ্লবী অস্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা ঐতিহ্যগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে এবং নির্ভুল আক্রমণের ক্ষমতা প্রদান করে। তবে, এদের সীমাবদ্ধতাগুলো তাদের ব্যবহারে কৌশলগত পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে। এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি আধুনিক যুদ্ধের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

Related Posts

সঙ্গে থাকুন ➥