ওমরাহ ভিসা ফি ২০২৫: বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে আবেদনের নিয়ম ও খরচ

Avatar

Published on:

ওমরাহ ভিসা ফি ২০২৫: বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে আবেদনের নিয়ম ও খরচ
ওমরাহ ভিসা ফি ২০২৫: বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে আবেদনের নিয়ম ও খরচ

ওমরাহ পালনের জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ সৌদি আরব ভ্রমণ করেন। তবে, অনেকেই জানেন না ওমরাহ ভিসা ফি কত টাকা, ভিসার মেয়াদ কত দিন, বা কীভাবে অনলাইনে ওমরাহ ভিসা আবেদন করতে হয়। এই আর্টিকেলে আমরা ওমরাহ ভিসা ফি ২০২৫, আবেদনের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এবং প্যাকেজের খরচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি ওমরাহ করতে ইচ্ছুক হন, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।

ওমরাহ ভিসা ফি কত টাকা?

ওমরাহ ভিসার খরচ নির্ভর করে প্যাকেজের ধরন এবং মেয়াদের উপর। বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ প্যাকেজের মূল্য সাধারণত ১,৩০,০০০ টাকা থেকে ৪,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এই খরচের মধ্যে ভিসা ফি, ফ্লাইট টিকেট, হোটেল বুকিং, এবং অন্যান্য সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিচে বিভিন্ন প্যাকেজের খরচের ধারণা দেওয়া হলো:

  • ৭ দিনের প্যাকেজ: ১,৩০,০০০–১,৮০,০০০ টাকা (স্ট্যান্ডার্ড)
  • ১৪ দিনের প্যাকেজ: ২,০০,০০০–২,৫৫,০০০ টাকা (সুপেরিয়র)
  • ১৭ দিন বা তার বেশি: ৩,০০,০০০–৪,২৫,০০০ টাকা (প্রিমিয়াম)

এই প্যাকেজগুলো সিঙ্গেল, ফ্যামিলি, বা গ্রুপ ভিত্তিতে পাওয়া যায়। বেশি মেয়াদের প্যাকেজ বা প্রিমিয়াম সুবিধার জন্য খরচ বেশি হয়।

টিপস: ভিসা ফি এবং প্যাকেজের খরচ নিয়ে সঠিক তথ্যের জন্য সৌদি দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করুন।

ওমরাহ ভিসার মেয়াদ কত দিন?

ওমরাহ ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৯০ দিন হয়। তবে, প্যাকেজের ধরন অনুযায়ী এই মেয়াদ কম বা বেশি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ: ৭–১৪ দিন
  • প্রিমিয়াম প্যাকেজ: ১৭–৩০ দিন

আপনি যদি দীর্ঘ সময় থাকতে চান, তাহলে বেশি মেয়াদের প্যাকেজ নির্বাচন করুন। ফ্যামিলি প্যাকেজে পুরো পরিবার বা কয়েকজন সদস্য একসাথে ওমরাহ পালন করতে পারেন।

ওমরাহ ভিসা আবেদন করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে?

ওমরাহ ভিসা আবেদনের জন্য নিচের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে:

  1. পাসপোর্ট: ৬ মাস মেয়াদসম্পন্ন পাসপোর্ট, যার মধ্যে অন্তত ৪টি পৃষ্ঠা ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য খালি থাকতে হবে।
  2. ছবি: সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ২ কপি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  3. কোভিড-১৯ টিকা সনদ: ফটোকপি।
  4. বিবাহ সনদ: বিবাহিত দম্পতির জন্য ফটোকপি।
  5. জন্ম সনদ: শিশুদের জন্য ফটোকপি।
  6. মাহরামের প্রমাণ: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে (মহিলাদের জন্য)।
  7. রাউন্ড-ট্রিপ ফ্লাইট টিকেট: বুকিং কনফার্মেশন।
  8. হোটেল বুকিং: সৌদি আরবে থাকার প্রমাণ।
  9. জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্ট কার্ড: ফটোকপি।
  10. ভিসা আবেদন ফরম: সঠিকভাবে পূরণকৃত।

এই কাগজপত্র সরাসরি অনলাইনে আবেদনের জন্য বা এজেন্সর মাধ্যমে প্যাকেজ ক্রয়ের সময় জমা দিতে হবে।

অনলাইনে ওমরাহ ভিসা আবেদন করার নিয়ম

ওমরাহ ভিসা আবেদনের জন্য সরাসরি সৌদি আরবের অফিসিয়াল ভিসা পোর্টাল বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা উত্তম। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া দেওয়া হলো:

  1. পাসপোর্ট প্রস্তুত করুন:

  2. অফিসিয়াল পোর্টালে প্রবেশ করুন:

    • সৌদি আরবের ভিসা পোর্টাল (https://visa.mofa.gov.sa/) বা অনুমোদিত এজেন্সির ওয়েবসাইটে যান।
    • “Umrah Visa” অপশন নির্বাচন করুন।
  3. আবেদন ফরম পূরণ করুন:

    • ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট নম্বর, এবং ভ্রমণের তারিখ প্রদান করুন।
    • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করুন (পাসপোর্ট, ছবি, টিকা সনদ ইত্যাদি)।
  4. প্যাকেজ নির্বাচন করুন:

    • অনলাইনে প্যাকেজের বিবরণ দেখে আপনার বাজেট ও চাহিদা অনুযায়ী একটি প্যাকেজ কিনুন।
    • প্যাকেজে ফ্লাইট, হোটেল, এবং গাইড সার্ভিস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
  5. পেমেন্ট করুন:

    • ভিসা ফি এবং প্যাকেজের মূল্য অনলাইনে পেমেন্ট করুন (ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা ব্যাংক ট্রান্সফার)।
    • পেমেন্ট কনফার্মেশন সংরক্ষণ করুন।
  6. ভিসা প্রসেসিং:

    • আবেদন জমা দেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা থেকে ৩ দিনের মধ্যে ভিসা ইস্যু হয়।
    • ইমেইল বা পোর্টাল থেকে ভিসা ডাউনলোড করুন।

নোট: সৌদি আরবের টুরিস্ট ভিসায় ওমরাহ পালনের সুযোগ সীমিত। তাই, ওমরাহ ভিসার জন্য সরাসরি আবেদন করা উচিত।

কেন এজেন্সির মাধ্যমে প্যাকেজ কিনবেন?

নিজে থেকে অনলাইনে আবেদন করার পরিবর্তে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহ প্যাকেজ কেনা বেশি সুবিধাজনক। এর সুবিধাগুলো হলো:

  • সহজ প্রক্রিয়া: এজেন্সি ভিসা আবেদন, ফ্লাইট, এবং হোটেল বুকিংয়ের দায়িত্ব নেয়।
  • গাইড সার্ভিস: সৌদি আরবে ওমরাহ পালন ও ভ্রমণে গাইড সহায়তা করে।
  • জরুরি সহযোগিতা: ভ্রমণের সময় যেকোনো সমস্যায় এজেন্সি সহযোগিতা প্রদান করে।
  • বিশ্বস্ততা: লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সেবা দেয়।

বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু এজেন্সির মধ্যে রয়েছে: ইটিএস হলিডেস, আল-মোবারাক ট্রাভেলস, এবং সোনালী ট্রাভেল এজেন্সি। তাদের ওয়েবসাইটে প্যাকেজের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।

ওমরাহ প্যাকেজের খরচ বিস্তারিত

ওমরাহ প্যাকেজের খরচ নির্ভর করে মেয়াদ, সুবিধা, এবং এজেন্সির উপর। নিচে সাধারণ প্যাকেজের ধরন ও খরচের ধারণা দেওয়া হলো:

প্যাকেজের ধরন মেয়াদ খরচ (টাকা) সুবিদ্ধা
স্ট্যান্ডার্ড ৭–১০ দিন ১,৩০,০০০–১,৮০,০০০ বেসিক হোটেল, ফ্লাইট, ভিসা ফি
সুপেরিয়র ১৪–১৫ দিন ২,০০,০০০–২,৫৫,০০০ ৪-স্টার হোটেল, গাইড, পরিবহন
প্রিমিয়াম ১৭–৩০ দিন ৩,০০,০০০–৪,২৫,০০০ ৫-স্টার হোটেল, ভিআইপি সুবিধা
  • সিঙ্গল প্যাকেজ: একক ভ্রমণকারীদের জন্য।
  • ফ্যামিলি/গ্রুপ প্যাকেজ: পরিবার বা গ্রুপের জন্য ছাড় সহ।
  • কাস্টমাইজড প্যাকেজ: আপনার চাহিদা অনুযায়ী প্যাকেজ তৈরি।

বেশি দিন থাকতে চাইলে বা প্রিমিয়াম সুবিধা নিতে প্রশ্নে খরচ বাড়বে।

ওমরাহ ভিসা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১. ওমরাহ করতে কত টাকা লাগে?

ওমরাহ করতে ১,৩০,০০০ টাকা থেকে ৪,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। প্যাকেজের সুবিধা ও মেয়াদ অনুযায়ী দাম কমবেশি হয়।

২. ওমরাহ করতে কত দিন লাগে?

ওমরাহ পালন ও সৌদি আরবে ভ্রমণে ৭ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। প্যাকেজের মেয়াদ অনুযায়ী সময় নির্ধারিত হয়।

৩. ওমরাহ ভিসা প্রসেসিংয়ে কত দিন লাগে?

ভিসা আবেদনের ২৪ ঘণ্টা থেকে ৩ দিন সময় লাগতে পারে। তবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সময় বাড়তে পারে।

৪. টুরিস্ট ভিসায় কি ওমরাহ করা যায়?

টুরিস্ট ভিসায় ওমরাহ পালনের সুযোগ সীমিত। তাই, ওমরাহ ভিসা নিয়ে যাওয়া উত্তম।

উপসংহার

এই আর্টিকেলে আমরা ওমরাহ ভিসা ফি ২০২৫, অনলাইনে ভিসা আবেদনের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এবং প্যাকেজের খরচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সির মাধ্যমে প্যাকেজ ক্রয় করা সুবিধাজনক এবং নিরাপদ। আপনার বাজেট ও চাহিদা অনুযায়ী একটি প্যাকেজ নির্বাচন করে সহজেই ওমরাহ সম্পন্ন করতে পারবেন।

আরও তথ্যের জন্য সৌদি দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা বিশ্বস্ত ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার ওমরাহ ভ্রমণ শুভ হোক!

Related Posts

সঙ্গে থাকুন ➥