ইসলামি ইতিহাসে ১০ মহররম, যা ‘আশুরা’ নামে পরিচিত, একটি তাৎপর্যময় ও ফজিলতপূর্ণ দিন। এই দিনে আল্লাহ তাআলা নবী মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নবী মুসা (আ.) এই দিনে রোজা রাখতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই আমলকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর উম্মতদেরও আশুরার রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো আশুরার রোজার তারিখ, কয়টি রোজা রাখতে হয়, এর ফজিলত এবং পালনের নিয়ম।
আশুরার রোজার ইতিহাস ও তাৎপর্য
আশুরার দিনের ইতিহাস ইসলামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহ তাআলা নবী মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের নির্যাতন থেকে রক্ষা করেন। এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা হিসেবে মুসা (আ.) রোজা রাখতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর ইহুদিদের এই দিনে রোজা রাখতে দেখে বলেছিলেন, “আমি তোমাদের চেয়ে মুসার (আ.) অধিক নিকটবর্তী।” (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)। এরপর তিনি নিজে রোজা রাখেন এবং সাহাবিদেরও এই রোজা পালনের নির্দেশ দেন।
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) চারটি আমল কখনো পরিত্যাগ করতেন না:
- আশুরার রোজা
- জিলহজের প্রথম দশকের রোজা
- প্রতি মাসে তিন দিনের রোজা
- ফজরের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ (সুনানে নাসায়ি: ২৪১৬)
আশুরার রোজার ফজিলত
আশুরার রোজা শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক আমল নয়, এটি গুনাহ মোচনের একটি বিরল সুযোগ। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আশুরার রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি, এটি বিগত এক বছরের গুনাহ মাফের কারণ হবে।” (সহিহ মুসলিম: ২৬১৭)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, আশুরার রোজা পালনের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার পূর্ববর্তী এক বছরের ছোটখাটো গুনাহ মাফের আশা করতে পারেন।
আশুরার রোজা কয়টি রাখতে হয়?
ইহুদিরা শুধুমাত্র ১০ মহররমে একটি রোজা রাখতো। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের ইহুদিদের অনুকরণ থেকে বিরত থাকতে বলেন এবং আশুরার দিনের সাথে আরও একটি দিন রোজা রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা কর—আগে বা পরে এক দিন রোজা রাখ।” (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৫)
সুতরাং, আশুরার রোজা দুই দিন পালন করা উত্তম:
- ৯ ও ১০ মহররম অথবা
- ১০ ও ১১ মহররম
এই দুই দিনের রোজা রাখলে সুন্নাহ পালনের পাশাপাশি ইহুদিদের থেকে পৃথক আমলের নির্দেশ পূরণ হয়।
আশুরার রোজা ২০২৫: কবে পালিত হবে?
বাংলাদেশে ২০২৫ সালে মহররম মাস শুরু হয়েছে ২৭ জুন, শুক্রবার। সেই হিসাবে ১০ মহররম (আশুরা) পড়বে ৬ জুলাই, রোববার। সুন্নাহ অনুযায়ী দুই দিনের রোজা রাখতে চাইলে নিম্নলিখিত দুটি বিকল্প রয়েছে:
- ৫ ও ৬ জুলাই (শনিবার ও রোববার)
- ৬ ও ৭ জুলাই (রোববার ও সোমবার)
উভয় বিকল্পই সুন্নাহ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য। আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
আশুরার রোজা কীভাবে পালন করবেন?
আশুরার রোজা পালনের জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলুন:
- নিয়ত করুন: রোজার জন্য সুন্নাহ অনুযায়ী নিয়ত করুন। নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট।
- সময় মেনে চলুন: ফজরের আগে থেকে মাগরিব পর্যন্ত রোজা পালন করুন।
- দুই দিন রাখুন: ৯ ও ১০ মহররম বা ১০ ও ১১ মহররম রোজা রাখুন।
- অন্যান্য আমল: রোজার পাশাপাশি তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া, এবং সৎ কাজের মাধ্যমে আশুরার দিনকে আরও ফলপ্রসূ করুন।
- নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকুন: রোজার সময় মিথ্যা, গীবত, এবং অন্যান্য গুনাহ থেকে দূরে থাকুন।
আশুরার রোজার গুরুত্ব
আশুরার রোজা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আমল নয়, এটি আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের একটি বিশেষ সুযোগ। এই রোজা পালনের মাধ্যমে একজন মুসলিম নিজেকে আধ্যাত্মিকভাবে শুদ্ধ করতে পারেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এই রোজা পালন করেছেন এবং তাঁর সাহাবিদেরও এটি পালন করতে উৎসাহিত করেছেন। এছাড়া, এই রোজা ইহুদিদের থেকে পৃথকভাবে মুসলিম উম্মাহর পরিচয় বহন করে।
জেনে রাখুন: আশুরার রোজা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
আশুরা কবে পালিত হবে ২০২৫ সালে?
বাংলাদেশে ১০ মহররম (আশুরা) পড়বে ৬ জুলাই, ২০২৫ (রোববার)।আশুরার রোজা কয় দিন রাখা উত্তম?
সুন্নাহ অনুযায়ী, আশুরার আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে মোট ২ দিন রোজা রাখা উত্তম।আশুরার রোজা রাখলে কী ফজিলত পাওয়া যায়?
এই রোজার মাধ্যমে বিগত এক বছরের ছোটখাটো গুনাহ মাফ হওয়ার আশা করা যায় (সহিহ মুসলিম: ২৬১৭)।আশুরার রোজা কীভাবে রাখবেন?
নিম্নলিখিত দুটি বিকল্পের যেকোনো একটি অনুসরণ করুন:- ৫ ও ৬ জুলাই (শনিবার ও রোববার)
- ৬ ও ৭ জুলাই (রোববার ও সোমবার)
আশুরার রোজা কারা পালন করতেন?
নবী মুসা (আ.), রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা এই রোজা পালন করতেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আশুরার রোজা সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।