সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য সুসংবাদ! সরকার এখন তাদের বেতন-ভাতা এবং গ্রেড বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা হবে। এছাড়া, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভাগীয় উপপরিচালক পর্যন্ত সবার বেতন এক গ্রেড করে বাড়ানোর সুপারিশ আসছে আগামী সপ্তাহে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
যদি আপনি একজন প্রাথমিক শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তা হন, তাহলে এই প্রস্তাব আপনার জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই কেন এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কী পরিবর্তন আসছে এবং এর ফলে কার বেতন কত হবে। আমি এই লেখায় সবকিছু সহজ করে ব্যাখ্যা করব, যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন।
বেতন বৃদ্ধির পটভূমি: কেন এই সিদ্ধান্ত?
সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। এতে একদিকে খুশি হলেও, অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কারণ? বর্তমানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেতনও ১০ম গ্রেডে। ফলে, প্রধান শিক্ষক এবং তাদের তদারকি কর্মকর্তার বেতন একই স্তরে চলে এসেছে, যা প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করছে।
অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকরা এখনও ১৩তম গ্রেডে আটকে আছেন। প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের মধ্যে তিন ধাপের পার্থক্য তৈরি হয়েছে, যা টাকার অংকে ইনক্রিমেন্টসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এই ব্যবধানকে 'বৈষম্য' হিসেবে দেখছেন অনেক শিক্ষক। এই অসন্তোষ দূর করতে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে সরকার এখন বেতন গ্রেড উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও এতে সম্মতি দিয়েছে। এই প্রস্তাবটি শিক্ষকদের মনোবল বাড়াবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন প্রস্তাবে কার বেতন কত হবে? বিস্তারিত তালিকা
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন প্রস্তাবে বিভিন্ন পদের বেতন স্কেল পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে আমি একটি সহজ টেবিলে সবকিছু তুলে ধরছি, যাতে আপনি এক নজরে বুঝতে পারেন। এই পরিবর্তনগুলো কার্যকর হলে, সারা দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষক এবং কর্মকর্তার জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পদের নাম | বর্তমান গ্রেড এবং স্কেল | প্রস্তাবিত গ্রেড এবং স্কেল | সংখ্যা (সারা দেশে) |
---|---|---|---|
শিক্ষক (পূর্বে সহকারী শিক্ষক) | ১৩তম গ্রেড (১১,০০০ টাকা স্কেল) | ১১তম গ্রেড (১২,৫০০ টাকা স্কেল) | সাড়ে তিন লাখের বেশি (৬৬ হাজার বিদ্যালয়ে) |
সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউএপিইও) | ১০ম গ্রেড (১৬,০০০ টাকা স্কেল) | ৯ম গ্রেড (২২,০০০ টাকা স্কেল) | ২,৬০৭ জন |
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিইও) | ৯ম গ্রেড (২২,০০০ টাকা স্কেল) | ৮ম গ্রেড (২৩,০০০ টাকা স্কেল) | ৫১৬ জন |
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) | ৭ম গ্রেড (২৯,০০০ টাকা স্কেল) | ৬ষ্ঠ গ্রেড (৩৫,৫০০ টাকা স্কেল) | ৬৮ জন |
বিভাগীয় উপপরিচালক (ডিডি) | ৫ম গ্রেড (৪৩,০০০ টাকা স্কেল) | ৪র্থ গ্রেড (৫০,০০০ টাকা স্কেল) | (উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত) |
এই টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক পদে এক বা দুই গ্রেডের উন্নয়ন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন সাধারণ শিক্ষকের বেতন স্কেল ১১,০০০ থেকে ১২,৫০০ টাকায় উঠবে, যা তাদের আর্থিক স্বস্তি দেবে। এই পরিবর্তনগুলো শুধু বেতন বাড়াবে না, বরং পদোন্নতির সুযোগও বাড়াবে।
বিশেষ প্রণোদনা এবং অন্যান্য সুবিধা
২০২৫ সাল থেকে শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা চালু হতে পারে। এর মধ্যে:
- ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মকর্তা/শিক্ষকদের জন্য: ১৫% প্রণোদনা।
- ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের জন্য: ১০% প্রণোদনা।
এই প্রণোদনা প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এবং শিক্ষকদের মোট আয়ে আরও বৃদ্ধি ঘটাবে। এছাড়া, সহকারী শিক্ষকদের পদনাম পরিবর্তন করে 'শিক্ষক' করা হয়েছে, যা তাদের সম্মান বাড়াবে।
মহাপরিচালকের মতামত এবং ভবিষ্যৎ
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেছেন, "সহকারী শিক্ষকদের পদনাম পরিবর্তন করে ‘শিক্ষক’ করা হয়েছে। তাদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীত করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিইও), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এবং বিভাগীয় উপপরিচালকদের (ডিডি) বেতন স্কেল এক ধাপ উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে।"
এই প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে, প্রাথমিক শিক্ষা খাতে একটা নতুন যুগ শুরু হবে। এতে শিক্ষকদের উৎসাহ বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদেরও উপকার হবে। এই লেখাটি আপনাদের জন্য লিখেছি, যাতে সহজে সব তথ্য পান। ধন্যবাদ!