কোরিয়ান রূপচর্চার ইতিহাস
কোরিয়ান রূপচর্চার শিকড় অনেক পুরনো। এটি ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে থ্রি কিংডমস যুগে (গোগুরিয়ো, বেকজে এবং সিল্লা) শুরু হয় এবং গোরিয়ো রাজবংশে (৯১৮-১৩৯২) চরমে পৌঁছায়, যখন লোকেরা নিজেদের সাজসজ্জায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।
১৯শ শতাব্দীর শেষে কোরিয়ান মেকআপ এবং প্রসাধনী জনপ্রিয় হতে শুরু করে, কিন্তু ১৯২০-এর দশকে জাপানি প্রোডাক্টস দখল করে নেয়। ১৯৫০-এর কোরিয়ান যুদ্ধের পর জাপানি শিল্পে বাধা পড়ে। অবশেষে, ১৯৬১ সালে বিদেশি পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করা হলে কোরিয়ান প্রসাধনী শিল্প ফুলে ওঠে।
আজ কোরিয়া বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম প্রসাধনী রপ্তানিকারক, ২০২১ সালে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে।
কোরিয়ানদের গ্লাস স্কিনের রহস্য
গ্লাস স্কিন মানে সেই চকচকে, হাইড্রেটেড ত্বক যা কাঁচের মতো প্রতিফলিত। এর রহস্য কোরিয়ানদের জীবনযাপনে লুকিয়ে আছে:
- ত্বকের যত্নে সচেতনতা: কোরিয়ানরা ত্বককে ভালোবাসেন এবং নিয়মিত যত্ন নেন, যাতে সমস্যা আগে থেকে প্রতিরোধ হয়।
- প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার: ক্যামেলিয়া ফুল, মুগ ডাল, চাল, অ্যালোভেরা, জিনসেং এবং গ্রিন টি-এর মতো ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্টস ব্যবহার করেন, যা ত্বককে পুষ্টি দেয় এবং অ্যান্টি-এজিং করে।
- নিয়মিত রুটিন: সাধারণত ১০ ধাপের রুটিন অনুসরণ করেন, যা কয়েক মিনিটেই সম্ভব কিন্তু প্রতিদিন করতে হয় ।
- হাইড্রেশনের গুরুত্ব: ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখা সবচেয়ে জরুরি, তাই হাইড্রেটিং প্রোডাক্টস ব্যবহার করেন।
কোরিয়ান রূপচর্চার ১০ ধাপের রুটিন
কোরিয়ান স্কিনকেয়ার রুটিনের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ হলো ১০ ধাপ, যা হাইড্রেশন এবং মাইল্ড এক্সফোলিয়েশনের উপর ফোকাস করে গ্লাস স্কিন দেয়।
এই ধাপগুলো:
- অয়েল-বেসড ক্লিনজার: মেকআপ এবং তেল দূর করে।
- ওয়াটার-বেসড ক্লিনজার: গভীর ময়লা পরিষ্কার করে।
- এক্সফোলিয়েটর: মৃত কোষ সরিয়ে ত্বক মসৃণ করে।
- টোনার: pH ব্যালেন্স করে এবং হাইড্রেট করে।
- এসেন্স: ত্বকের গভীরে পুষ্টি যোগায়।
- সিরাম বা অ্যাম্পুল: ব্রণ, দাগ বা অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্য।
- শিট মাস্ক: তাৎক্ষণিক হাইড্রেশন।
- আই ক্রিম: চোখের চারপাশের ত্বক রক্ষা করে।
- ময়েশ্চারাইজার: ত্বক নরম রাখে।
- সানস্ক্রিন (SPF): দিনে সূর্য থেকে রক্ষা করে।
কিছু ধাপ প্রতিদিন, অন্যগুলো সপ্তাহে ২-৩ বার করুন।
কোরিয়ান প্রসাধনীর জনপ্রিয়তার কারণ
K-Beauty বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কারণ:
- সাশ্রয়ী দাম: পশ্চিমা ব্র্যান্ডের তুলনায় সস্তা কিন্তু কার্যকর।
- ইফেক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস: স্নেল মিউসিন, নিয়াসিনামাইডের মতো উপাদান ত্বকের জন্য উপকারী।
- ইনোভেশন: নতুন প্রোডাক্টস এবং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে
- আকর্ষণীয় প্যাকেজিং: কিউট এবং আধুনিক।
- K-Pop এবং K-Drama: সেলিব্রিটিদের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
কেয়া কসমেটিকসের পতন
বাংলাদেশে কেয়া কসমেটিকস একসময় জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু এখন এর অবনতি ঘটেছে। ২০২৫ সালে কোম্পানি চারটি ফ্যাক্টরি বন্ধ করেছে, যা ৮০০০ কর্মীকে প্রভাবিত করেছে। কারণসমূহ: মার্কেট অস্থিরতা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টসে অসঙ্গতি, কাঁচামালের অভাব, বিজ্ঞাপনের দুর্বলতা, গার্মেন্টস ব্যবসায় ফোকাস এবং ঋণের বোঝা।
কোরিয়ান রূপচর্চার ঘরোয়া টিপস
গ্লাস স্কিন পেতে ঘরোয়া উপায়:
- চালের জল: চাল ধোয়া জল দিয়ে মুখ ধুলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
- মধু এবং চিনি: স্ক্রাব তৈরি করে মৃত কোষ সরান।
- অ্যালোভেরা এবং চিয়া সিড: মাস্ক করে ত্বক নরম করুন
- গ্রিন টি: স্ক্রাব বা মাস্কে ব্যবহার করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগান।
- তুর্মেরিক এবং লেমন: টারমেরিক, লেমন এবং ইয়োগার্ট মিশিয়ে মাস্ক লাগান।
কোরিয়ান রূপচর্চা বনাম জাপানি রূপচর্চা
দুইটি এশিয়ান রূপচর্চার মধ্যে পার্থক্য:
বৈশিষ্ট্য | কোরিয়ান রূপচর্চা | জাপানি রূপচর্চা |
---|---|---|
ফোকাস | হাইড্রেশন এবং উজ্জ্বলতা | পরিষ্কার এবং রক্ষা |
ধাপসংখ্যা | ১০+ ধাপ | কম ধাপ, মিনিমালিস্ট |
উপাদান | প্রাকৃতিক এবং ইনোভেটিভ (যেমন স্নেল মিউসিন) | ঐতিহ্যবাহী (যেমন গ্রিন টি, রাইস) |
দর্শন | ভিতর থেকে সুন্দর করা | ক্ষতি প্রতিরোধ |
ত্বকের লক্ষ্য | গ্লাস স্কিন (ডিউয়ি) | ম্যাট মোচি স্কিন (স্মুথ) |
কোরিয়ান রুটিন বেশি এক্সপেরিমেন্টাল, জাপানি সিম্পল এবং লং-টার্ম ফোকাসড।
কোরিয়ান সৌন্দর্যের মান এবং চ্যালেঞ্জস
কোরিয়ান সৌন্দর্যে ফর্সা ত্বক, ছোট মুখ, V-শেপ চিবুক এবং বড় চোখ প্রিয়। কিন্তু এই স্ট্যান্ডার্ডস চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে "Escape the Corset" মুভমেন্ট শুরু হয়েছে। এতে নারীরা মেকআপ ছেড়ে, চুল কেটে বা প্রোডাক্টস ধ্বংস করে প্রতিবাদ করেন, যাতে সৌন্দর্যের অসম্ভব মান থেকে মুক্তি পান।
কোরিয়ান প্রসাধনীর ভবিষ্যৎ
২০২৫-এ K-Beauty আরও উজ্জ্বল। ট্রেন্ডস: স্যালমন স্পার্ম (PDRN), ফার্মেন্টেড পাইন নিডল, জেলি মিস্টস, ওভারনাইট সিরাম মাস্কস, AI-পার্সোনালাইজড স্কিনকেয়ার, ওয়াটারলেস প্রোডাক্টস এবং সাসটেইনেবল ইনগ্রিডিয়েন্টস।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাপানে চাহিদা বাড়ছে, এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে ট্রেন্ডস ছড়িয়ে পড়ছে।