নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং এটি আদায়ের সময় পবিত্রতা ও মনোযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, নামাজের সময় দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে বা তা গিলে ফেললে নামাজের হুকুম কী হয়? এই নিবন্ধে আমরা ইসলামী শরিয়াহর আলোকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং নির্ভরযোগ্য ফতোয়া ও হাদিসের উল্লেখ করব।
দাঁতে আটকে থাকা খাবারের হুকুম
ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী, নামাজের সময় দাঁতের ফাঁকে খাবার থাকা বা তা গিলে ফেলার হুকুম খাবারের পরিমাণ এবং গিলে ফেলার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। নিচে এটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. খাবারের পরিমাণ যদি ছোলার সমান বা বড় হয়
যদি দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের পরিমাণ একটি ছোলার দানার সমান বা তার চেয়ে বড় হয় এবং নামাজের সময় তা ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলা হয়, তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। এই হুকুম ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি (১/১০২) এবং মারাকিল ফালাহ (১/১২১) গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে।
২. খাবারের পরিমাণ যদি ছোলার চেয়ে ছোট হয়
যদি দাঁতের ফাঁকে থাকা খাবারের পরিমাণ ছোলার দানার চেয়ে ছোট হয় এবং তা অনিচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলা হয়, তাহলে নামাজ ভাঙবে না। শরিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে এত অল্প পরিমাণ খাবার গিলে ফেলা খাওয়া হিসেবে গণ্য হয় না। এটি ফিকহুস সুন্নাহ (১/১৩০) এবং কিতাবুন নাওয়াজেল (৪/১০০) গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
দাঁত পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব
নামাজের পূর্বে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার রাখা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিসওয়াক ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন, যা মুখের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে এবং নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। একটি হাদিসে তিনি বলেছেন:
“যে ব্যক্তি খাবার খায়, সে অবশ্যই দাঁত খিলাল করবে। যা খিলালের মাধ্যমে বের হয়, তা বাইরে ফেলে দিতে হবে। আর যা জিভের মাধ্যমে বের হয়, তা গিলে ফেলা যাবে।”
(সুনানে দারেমি, পৃষ্ঠা ৫০০)
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে:
“যে ব্যক্তি খিলাল ব্যবহার করেছে, সে ভালো কাজ করেছে। আর যে ব্যবহার করেনি, তার জন্য কোনো দোষ নেই।”
(সুনানে দারেমি, পৃষ্ঠা ২২৪)
মিসওয়াক বা আধুনিক দাঁত মাজার ব্যবহার নামাজের পবিত্রতা ও মনোযোগ বাড়ায়। তাই খাবার খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করা উত্তম।
নামাজের সময় দাঁতে খাবার থাকলে করণীয়
নামাজের আগে পরিষ্কার করুন: নামাজ শুরু করার আগে দাঁতের ফাঁকে খাবার আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। সম্ভব হলে মিসওয়াক বা দাঁত মাজার ব্রাশ ব্যবহার করুন।
অনিচ্ছাকৃত গিলে ফেলা: যদি অল্প পরিমাণ খাবার অনিচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলেন, তাহলে নামাজ চালিয়ে যান।
ইচ্ছাকৃত বড় খাবার গিলে ফেলা: যদি ছোলার সমান বা বড় খাবার ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলেন, তাহলে নামাজ পুনরায় আদায় করুন।
নিয়মিত মুখের পরিচ্ছন্নতা: নিয়মিত মিসওয়াক বা দাঁত মাজার ব্যবহার করুন। এটি সুন্নত এবং নামাজের জন্য উপকারী।
সতর্কতা ও পরামর্শ
নামাজের সময় মুখে খাবারের গন্ধ থাকলে তা অন্যদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তাই মুখ পরিষ্কার রাখা জরুরি।
যদি দাঁতের ফাঁকে খাবার থাকার বিষয়ে সন্দেহ হয়, তবে নামাজের আগে মুখ ধুয়ে নিন।
বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন, রোজার সময়), দাঁত পরিষ্কার করার সময় সতর্ক থাকুন যেন পানি গিলে না ফেলেন।
উপসংহার
দাঁতে আটকে থাকা খাবার নামাজের হুকুমের ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ ও গিলে ফেলার উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ। ছোট পরিমাণ খাবার অনিচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে নামাজ নষ্ট হয় না, তবে বড় পরিমাণ খাবার ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। নামাজের পূর্বে মিসওয়াক বা দাঁত মাজার ব্যবহার সুন্নত এবং এটি নামাজের পবিত্রতা বৃদ্ধি করে।
সূত্র:
ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১০২
ফিকহুস সুন্নাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩০
কিতাবুন নাওয়াজেল, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১০০
মারাকিল ফালাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২১
সুনানে দারেমি, পৃষ্ঠা ৫০০, ২২৪
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি সফিউল্লাহ, উস্তাযুল হাদিস, জামিয়া মিফতাহুল উলুম, নেত্রকোনা