বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে নতুন বেতন স্কেলের অপেক্ষায় রয়েছেন। সাম্প্রতিক খবরে জানা গেছে, নবম জাতীয় বেতন কাঠামো (নতুন পে স্কেল ২০২৫) বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এজন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সরকারের মেয়াদেই নতুন পে স্কেল কার্যকর হবে, এবং পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করা হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা জানান, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে নতুন পে স্কেল যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই সেজন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বাজেট সংশোধন ডিসেম্বরে শুরু হবে, যেখানে নতুন পে স্কেলের বিধান যুক্ত করা হবে। এই খবর সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছে, কারণ বর্তমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে বেতন বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। নিচে নতুন পে স্কেলের সর্বশেষ আপডেট, সুপারিশ এবং বাস্তবায়নের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নতুন পে স্কেল ২০২৫: কার্যকর তারিখ ও বাজেটের পরিকল্পনা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, নতুন বেতন কাঠামো চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হবে। বাজেট সংশোধন প্রক্রিয়া ডিসেম্বর ২০২৫-এ শুরু হবে, এবং এতে নতুন পে স্কেলের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দের বিধান যুক্ত করা হবে। সম্ভাব্য কার্যকর তারিখ হিসেবে মার্চ-এপ্রিল ২০২৬ উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
বিবরণ | তথ্য |
---|---|
কার্যকর তারিখ | মার্চ-এপ্রিল ২০২৬ (সম্ভাব্য) |
বাজেট সংশোধন | ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু |
তহবিল বরাদ্দ | চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে (৮৪,৬৮৪ কোটি টাকা বেতন-ভাতার জন্য) |
পূর্ববর্তী স্কেল | ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল (২০১৫) |
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটির তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজেটে নতুন পে স্কেলের অতিরিক্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পে কমিশন ২০২৫: গঠন, সুপারিশ ও অগ্রগতি
গত ২৪ জুলাই ২০২৫-এ সরকার নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য পে কমিশন গঠন করে। কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান। তিনি সম্প্রতি জানান, ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশসমূহ জমা দেওয়া হবে। কমিশনের এক সদস্য (নাম প্রকাশের শর্তে) বলেন, সর্বোচ্চ (গ্রেড-১) এবং সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) গ্রেডের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে সংখ্যা কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে, এবং সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখা হবে। এটি প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশের মডেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কমিশন বর্তমানে বেসরকারি খাতের উপর চাপ সৃষ্টি না হয় এমনভাবে সুপারিশ প্রস্তুত করছে। আগামী অক্টোবরে ব্যবসায়ী চেম্বার এবং সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। এছাড়া, পোশাক শিল্পসহ ৪৫টি খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি জাতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করার সুপারিশ থাকবে।
ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার সংশোধন: কী বাড়বে?
পে কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে:
- চিকিৎসা ভাতা: বর্তমানে মাসে ১,৫০০ টাকা (চাকরির শুরু থেকে অবসর পর্যন্ত)। এটি বাড়ানো হবে, এবং অবসরোত্তর সময়ে অতিরিক্ত সুবিধা যুক্ত করা হবে।
- শিক্ষা ভাতা: কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য বাড়ানোর সুপারিশ।
- বিশেষ ভাতা: গবেষণায় সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য প্রণোদনামূলক ভাতা। এটি অন্য সামরিক বা বেসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া, ২০১৫ সালের পে কমিশনের মতো সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করে স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব থাকতে পারে। এটি পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।
কারা পাবে এবং কারা বাদ পড়বে?
বর্তমানে জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পান। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, সশস্ত্র বাহিনী এবং বিচারকদের আলাদা কাঠামো রয়েছে। কমিশনের সুপারিশে এগুলো জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে, কিন্তু আলাদা কাঠামো বহাল থাকবে।
খাত | বর্তমান অবস্থা | সুপারিশ |
---|---|---|
সাধারণ সরকারি কর্মচারী | ১৪ লাখ+ | নতুন পে স্কেল প্রযোজ্য |
সশস্ত্র বাহিনী | আলাদা কাঠামো | সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে |
ব্যাংক/বিদ্যুৎ | আলাদা কাঠামো | সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে |
গবেষক/শিক্ষক | সাধারণ কাঠামো | বিশেষ ভাতা যুক্ত |
কেন এত অপেক্ষা? চ্যালেঞ্জ ও প্রভাব
পে কমিশন মনে করে, নতুন বেতন কাঠামো বেসরকারি খাতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে বর্তমান দুর্বল বিনিয়োগ পরিবেশে। তাই ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, বৃদ্ধির হার (গড়ে কত শতাংশ বাড়বে) এখনও চূড়ান্ত নয়। পূর্ববর্তী স্কেলগুলোতে (১৯৭৩ থেকে ২০১৫) ৫ বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু করোনা এবং অর্থনৈতিক সংকটে বিলম্ব হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য পরামর্শ
- আপডেট থাকুন: অফিসিয়াল সাইট (paycommission2025.gov.bd) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট চেক করুন।
- প্রস্তুতি: পদোন্নতি এবং ভাতার পরিবর্তনের জন্য HR বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
- আশা: এই স্কেল মূল্যস্ফীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।
নতুন পে স্কেল ২০২৫ সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর। যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান, কমেন্টে জিজ্ঞাসা করুন। সরকারের এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়!
এই আর্টিকেলটি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পে কমিশনের সাম্প্রতিক ঘোষণা এবং নিউজ সোর্সের ভিত্তিতে তৈরি। আরও আপডেটের জন্য ফলো করুন।