দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নয়নের দীর্ঘ দাবি অবশেষে পূর্ণতা পাচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৬৫,৫০২ জন প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশিত হয়েছে, যা শিক্ষকদের মধ্যে উল্লাস ছড়িয়েছে। বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীনরা ১২তম গ্রেডে রয়েছেন। এই উন্নয়নের ফলে তাদের বেতন-ভাতা বাড়বে এবং কর্মক্ষেত্রে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। যদি আপনি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক ১০ম গ্রেড উন্নয়ন ২০২৫, বেতন স্কেল, শর্তাবলী বা প্রক্রিয়া জানতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলে সবকিছু বিস্তারিত গাইড করা হলো। এই সিদ্ধান্তটি ৯ অক্টোবর ২০২৫-এ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে নির্দেশিত হয়েছে।
প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড উন্নয়ন: সরকারি নির্দেশনা ও পটভূমি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা-১৪ শাখার সহকারী সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, "এখন থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ১০ম গ্রেড অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন।" এই চিঠি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা প্রক্রিয়া শুরু করে। এই সিদ্ধান্তটি দীর্ঘদিনের দাবির ফল, যা হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে চলা এই দাবি ২০২৫-এ পূর্ণতা লাভ করছে।
বর্তমান অবস্থায়:
- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক: ১১তম গ্রেড (বেতন স্কেল: ১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা)।
- প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক: ১২তম গ্রেড (বেতন স্কেল: ১২,৫০০-৩০,২৩০ টাকা)।
এই উন্নয়নের ফলে সকলে ১০ম গ্রেডে (বেতন স্কেল: ১৬,০০০-৩৮,৪৯০ টাকা) চলে যাবেন, যা বেতন বৃদ্ধির সাথে মর্যাদা বাড়াবে। এতে প্রায় ৬৫,৫০২ জন শিক্ষক সুবিধাভোগী হবেন।
১০ম গ্রেড উন্নয়নের শর্তাবলী: কী করতে হবে?
গ্রেড পরিবর্তনের জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে, যা চিঠিতে উল্লেখিত:
- অর্থ বিভাগের সম্মতি: ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অনুমোদন নিতে হবে।
- বেতন স্কেল নির্ধারণ: অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের দায়িত্ব।
- প্রশাসনিক অনুমোদন: প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সম্মতি।
- নিয়োগবিধি সংশোধন: পদ উন্নয়নের বিষয়টি বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- প্রশিক্ষণবিহীনদের জন্য: সরকারি আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৬ মাসের মধ্যে "Basic Training for Primary Teachers" সম্পন্ন করতে হবে।
প্রক্রিয়া শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি আদেশের কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ২০২৫-এর শেষে বাস্তবায়িত হতে পারে।
প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল: ১০ম গ্রেডে কত বাড়বে?
১০ম গ্রেডে উন্নয়নের ফলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে:
| গ্রেড | বেতন স্কেল (টাকা) | বার্ষিক বৃদ্ধি | অনুমানিত মাসিক বেতন (ভাতা সহ) |
|---|---|---|---|
| ১০ম গ্রেড (নতুন) | ১৬,০০০ - ৩৮,৪৯০ | ১,৩০০ | ৩৫,০০০ - ৫০,০০০+ |
| ১১তম গ্রেড (বর্তমান প্রশিক্ষিত) | ১১,০০০ - ২৬,৫৯০ | ৯০০ | ২৫,০০০ - ৩৫,০০০ |
| ১২তম গ্রেড (বর্তমান অপ্রশিক্ষিত) | ১২,৫০০ - ৩০,২৩০ | ১,০০০ | ২৮,০০০ - ৩৮,০০০ |
- বৃদ্ধির পরিমাণ: গড়ে ৫,০০০-১০,০০০ টাকা মাসিক বাড়তে পারে (ভাতা, ভ্রমণ ভাতা সহ)।
- কার্যকর তারিখ: সরকারি আদেশ জারির তারিখ থেকে। প্রশিক্ষণবিহীনরা ১৬ মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিলে পুরো সুবিধা পাবেন।
এই উন্নয়ন শিক্ষকদের কর্ম উৎসাহিত করবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াবে।
প্রক্রিয়া কীভাবে এগোবে? পরবর্তী ধাপ
- প্রস্তাব জমা: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে।
- অনুমোদন: অর্থ বিভাগ এবং প্রশাসনিক সচিব কমিটির সম্মতি নেওয়া।
- নিয়োগবিধি সংশোধন: বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে ১০ম গ্রেড অন্তর্ভুক্ত।
- সরকারি আদেশ জারি: সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষে আদেশ প্রকাশ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কপি পাঠানো।
- বাস্তবায়ন: ২০২৫-এর শেষে বা ২০২৬ শুরুতে বেতন বৃদ্ধি শুরু।
প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের জন্য "Basic Training for Primary Teachers" কোর্সটি অবশ্যক, যা ১৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
সহকারী শিক্ষকদের দাবি: ১১তম গ্রেডের অপেক্ষা
প্রধান শিক্ষকদের সুবিধার পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন করছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাবে শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম গ্রেড করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করছেন। এই উন্নয়নও শীঘ্রই হতে পারে।
উপসংহার: প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য নতুন যুগ
প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড উন্নয়ন ২০২৫-এ একটি মাইলফলক, যা ৬৫,৫০২ শিক্ষকের জীবন বদলে দেবে। শর্তাবলী পূরণ করে প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হোক। সহকারী শিক্ষকদেরও সুবিধা আশা করা যায়।

