আজকের পেঁয়াজের দাম – এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের প্রত্যেক গৃহিণী এবং বাজারপ্রেমীদের মনে প্রায়ই আসে। পেঁয়াজ শুধু একটি সবজি নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন রান্নার অপরিহার্য উপাদান, যা মোল্লিকের ঝোল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মশলাদার খাবারে ব্যবহৃত হয়। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ওঠানামার কারণে ক্রেতারা বিভ্রান্ত, কারণ ভারতীয় আমদানি নিষেধাজ্ঞা, দেশীয় উৎপাদনের ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দাম ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। আজ, ৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে, ঢাকার কারওয়ান বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের খুচরা দাম প্রতি কেজিতে ১২০-১৫০ টাকা, যখন আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকা। এই বিস্তারিত নিবন্ধে আমরা আজকের পেঁয়াজের দামের সর্বশেষ তথ্য, বিভিন্ন শহরের মূল্য তালিকা, দামের কারণ, পুষ্টিগুণ, রান্নার রেসিপি, সংরক্ষণের টিপস এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করব।
পেঁয়াজ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? বাংলাদেশী রান্নায় এর ভূমিকা
পেঁয়াজ (Allium cepa) হলো লিলিয়েসিয়াম পরিবারের একটি সবজি, যা প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লক্ষ টন, কিন্তু উৎপাদন মাত্র ৮ লক্ষ টন, ফলে ৬০% আমদানি-নির্ভর। এএমএ রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালে পেঁয়াজের দামের ওঠানামা ক্রেতাদের খাদ্য ব্যয় ১৫% বাড়িয়েছে।
পেঁয়াজের স্বাদ এবং গন্ধ ক্যাপসা এবং সালফার কম্পাউন্ড থেকে আসে, যা রান্নায় মশলা হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশী রান্নায় পেঁয়াজ ভাজা (পিয়াজ ভাজা) প্রায় প্রত্যেকটি কারিতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলিশ মাছের ঝোলে পেঁয়াজের ব্যবহার ছাড়া স্বাদ অসম্পূর্ণ। এছাড়া, পেঁয়াজের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। WHO অনুসারে, দৈনিক ১০০ গ্রাম পেঁয়াজ খেলে হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি ১৫% কমে।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা রমজান, ঈদ এবং শীতকালে চরমে পৌঁছায়, যখন দাম ২০-৩০% বাড়ে। ২০২৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ফসল ক্ষতি হওয়ায় দাম আরও অস্থির হয়েছে।
আজকের পেঁয়াজের দাম: সর্বশেষ মূল্য তালিকা
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম দেশীয় উৎপাদনের ঘাটতির কারণে বেড়েছে। প্রথম আলো এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে, ঢাকার খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১২৫-১৫৫ টাকা। আমদানিকৃত (ভারতীয়) পেঁয়াজ ১০৫-১২৫ টাকা। নিচে বিস্তারিত তালিকা:
| শহর/অঞ্চল | দেশীয় পেঁয়াজ (পাইকারি, টাকা/কেজি) | দেশীয় পেঁয়াজ (খুচরা, টাকা/কেজি) | আমদানিকৃত পেঁয়াজ (খুচরা, টাকা/কেজি) |
|---|---|---|---|
| ঢাকা (কারওয়ান) | ১০৫-১২০ | ১২৫-১৫৫ | ১০৫-১২৫ |
| চট্টগ্রাম | ১০০-১১৫ | ১২০-১৪৫ | ১০০-১২০ |
| সিলেট | ১১০-১২৫ | ১৩০-১৬০ | ১১০-১৩০ |
| রাজশাহী | ৯৫-১১০ | ১১৫-১৪০ | ৯৫-১১৫ |
| খুলনা | ১০৫-১২০ | ১২৫-১৫০ | ১০৫-১২৫ |
| গ্রামীণ এলাকা | ৯০-১০৫ | ১১০-১৩৫ | ৯০-১১০ |
সূত্র: এএমএ বাজারদর এবং আজকের সংবাদ দাম। আগস্ট ২০২৫-এ দেশীয় পেঁয়াজ ৭০-৮৫ টাকা ছিল, কিন্তু অক্টোবরে ২৫-৩০% বেড়েছে। আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ায় দাম স্থিতিশীল হচ্ছে।
দামের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
২০২৪ সালের নভেম্বরে দাম ছিল ৮০-১০০ টাকা, কিন্তু ২০২৫-এ ২০% বৃদ্ধি হয়েছে। শহুরে এলাকায় দাম বেশি, গ্রামে কম। খবরের কাগজ অনুসারে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হওয়ায় দাম ১০% কমতে পারে।
আজকের পেঁয়াজের দামের উপর প্রভাবকারী ফ্যাক্টরসমূহ
পেঁয়াজের দাম নির্ধারণে বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে। ২০২৫ সালে প্রধান কারণগুলো:
- আমদানি নির্ভরতা: বাংলাদেশ ৬০% পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, ২০২৫-এ ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা (এপ্রিল-আগস্ট) দাম ৫০% বাড়িয়েছে। হিলি এবং ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি পুনরায় শুরু হলে দাম কমবে।
- দেশীয় উৎপাদন: বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ফরিদপুর, পাবনা, বগুড়ায় কেন্দ্রীভূত। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্ল্যাবট ব্লাইট রোগে ফসল ২০% কমেছে। এএমএ রিপোর্টে বলা হয়েছে, শীতকালীন ফসল (রাবি মৌসুম) ২০২৫-এ ৭ লক্ষ টন হবে।
- সরবরাহ চেইন: কৃষক থেকে পাইকারি বাজার (কারওয়ান, খতুনগঞ্জ) পর্যন্ত মধ্যস্বত্বভোগীদের লোভ দাম বাড়ায়। জাগো নিউজ অনুসারে, সংগ্রহকারীদের স্টকিং দাম ১৫% বাড়িয়েছে।
- আন্তর্জাতিক বাজার: ভারতে পেঁয়াজের দাম ৫০-৭০ রুপি/কেজি, যা ডলার রেট (১১৮ টাকা) এর প্রভাবে বাংলাদেশে বাড়ে। বাংলা ট্রিবিউন এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্রের ফসল ক্ষতি আমদানি খরচ বাড়িয়েছে।
- সিজনাল প্রভাব: গ্রীষ্মে দাম কম (৫০-৭০ টাকা), শীতে বেশি (১৫০+ টাকা)। রমজানে চাহিদা ৩০% বাড়ে।
এই ফ্যাক্টরগুলোর কারণে ২০২৫-এ গড় দাম ১১০ টাকা/কেজি, যা ২০২৪-এর ৯০ টাকার চেয়ে বেশি।
পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা
পেঁয়াজ কম ক্যালরি (৪০ কিলোক্যালরি/১০০গ্রাম) কিন্তু পুষ্টিকর। এতে ভিটামিন সি (৭.৪ মিলিগ্রাম), ফাইবার (১.৭ গ্রাম) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (কোয়ার্সেটিন) রয়েছে। হেলথলাইন অনুসারে, পেঁয়াজ:
- হার্ট স্বাস্থ্য: রক্তচাপ কমায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ: অ্যান্টি-ক্যান্সার কম্পাউন্ড থাকে।
- ইমিউনিটি: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ঠান্ডা-জ্বর প্রতিরোধ করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: ফাইবার ভরা, কম ক্যালরি।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। দৈনিক ৫০ গ্রাম পেঁয়াজ খেলে ভিটামিন সি-এর ১০% চাহিদা মেটে। লাল পেঁয়াজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি, সাদা পেঁয়াজে ফাইবার।
পেঁয়াজের রান্নার সহজ রেসিপি: বাংলাদেশী স্টাইলে
১. পেঁয়াজ ভাজা (পিয়াজ ভর্তা)
উপকরণ (৪ জনের): পেঁয়াজ ৫০০গ্রাম, লঙ্কা ২টি, ধনে পাতা, লবণ। পদ্ধতি: পেঁয়াজ ভেজে ম্যাশ করুন, লঙ্কা-ধনে মিশিয়ে খান। সময়: ১০ মিনিট। ক্যালরি: ৮০/সার্ভিং।
২. পেঁয়াজের ঝোল
উপকরণ: পেঁয়াজ ৩০০গ্রাম, আলু ২টি, জিরা, হলুদ, তেল। পদ্ধতি: পেঁয়াজ কুচিয়ে ভাজুন, আলু-মশলা মিশিয়ে জ্বাল দিন। সময়: ২০ মিনিট।
৩. সালাদ: পেঁয়াজ-টমেটো
কুচানো পেঁয়াজ-টমেটো লেবুর রসে মিশিয়ে খান। ভিটামিন বুস্টার।
এই রেসিপিগুলো দিয়ে আজকের দামে সাশ্রয়ী খাবার তৈরি করুন।
পেঁয়াজ সংরক্ষণের টিপস: দাম বাড়লে কীভাবে বাঁচাবেন
পেঁয়াজের দাম বাড়লে সংরক্ষণ জরুরি। এফএও অনুসারে:
- শুকনো জায়গায় রাখুন, আলু থেকে দূরে।
- ফ্রিজে না রাখুন, ঘরের তাপমাত্রায় ১-২ মাস স্থায়ী।
- কাটা পেঁয়াজ ফুড র্যাপে মুড়ে ফ্রিজে রাখুন (৩-৫ দিন)।
- সংরক্ষণে এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার করুন, যা ফরিদপুরের কৃষকরা করছেন।
এতে ২০% অপচয় কমবে।
পেঁয়াজের বাজার প্রবণতা: ২০২৫ এবং ভবিষ্যৎ
২০২৫ সালে পেঁয়াজের দাম গড়ে ১০৫ টাকা/কেজি, কিন্তু শীতে ১৫০+ হতে পারে। বাংলা ট্রিবিউন অনুসারে, আমদানি অনুমতি অব্যাহত রাখলে দাম স্থিতিশীল। ভবিষ্যতে হাইব্রিড জাত (যেমন ওষা, রেড ক্রিস্টাল) চাষ বাড়ালে উৎপাদন ২০% বাড়বে। সরকারের স্টকিং এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ দাম নিয়ন্ত্রণ করবে।
কোথায় কিনবেন এবং খরচ কমানোর উপায়
- বাজার: কারওয়ান, খতুনগঞ্জ, লোকাল হাট।
- অনলাইন: চালঘর বা ফুডপান্ডা।
- টিপস: পাইকারি কিনুন, সিজনাল অফার দেখুন, লাল পেঁয়াজ বেছে নিন (সস্তা)।
উপসংহার
আজকের পেঁয়াজের দাম ২০২৫ সালে ১২০-১৫০ টাকা রেঞ্জে থাকলেও, আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ায় স্বস্তির খবর। পেঁয়াজ শুধু খাবার নয়, স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। সঠিক সংরক্ষণ এবং স্থানীয় চাষ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করুন। সর্বদা বিশ্বস্ত সোর্স থেকে কিনুন এবং সরকারি রিপোর্ট চেক করুন। এই নিবন্ধ আপনার কেনাকাটায় সাহায্য করলে আমরা সন্তুষ্ট।
প্রশ্ন-উত্তর সেকশন
১. আজকের পেঁয়াজের দাম কত ঢাকায়?
উত্তর: ১২৫-১৫৫ টাকা/কেজি (দেশীয়), ১০৫-১২৫ টাকা (আমদানিকৃত)।
২. পেঁয়াজের দাম কেন বেড়েছে?
উত্তর: আমদানি নিষেধাজ্ঞা, উৎপাদন ঘাটতি এবং স্টকিংয়ের কারণে।
৩. পেঁয়াজ কতদিন সংরক্ষণ করা যায়?
উত্তর: শুকনো জায়গায় ১-২ মাস।
৪. কোন পেঁয়াজ স্বাস্থ্যকর?
উত্তর: লাল পেঁয়াজ – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি।
৫. ভবিষ্যতে দাম কমবে কি?
উত্তর: আমদানি বাড়লে হ্যাঁ, শীতে বাড়তে পারে।

