সেন্ট মার্টিন খুলছে, কিন্তু মাত্র ৩ মাসের জন্য! ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন আবার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে, কিন্তু এবার নিয়মগুলো কঠোর। দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ থাকার পর (ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত) এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ রক্ষায় সরকার ১২টি নির্দেশনা জারি করেছে। নভেম্বর মাসে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সীমিত রাতের থাকা, এবং ফেব্রুয়ারির পর আবার বন্ধ – মোট ৪ মাসের মৌসুম, কিন্তু নভেম্বরের প্রথম মাসটি সবচেয়ে কঠোর। QR কোড সহ অনলাইন টিকিট বাধ্যতামূলক, পলিথিন নিষিদ্ধ, এবং নৌযান চলাচলের কঠোর নিয়ন্ত্রণ। এই নতুন নিয়ম কেন এলো? কীভাবে ভ্রমণ করবেন? খরচ কত? সবকিছু জানুন এই বিস্তারিত গাইডে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ: বাংলাদেশের প্রবাল স্বর্গের পরিচিতি
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রবাল দ্বীপটি বাংলাদেশের একমাত্র করাল গঠিত দ্বীপ। এর ক্ষেত্রফল মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটার, কিন্তু এখানকার নীল জলরাশি, সাদা বালুকাময় সমুদ্রতীর, প্রবাল প্রাচীর এবং জীববৈচিত্র্য (১৫০+ প্রজাতির মাছ, স্টারফিশ, শেল) এটিকে 'কক্সবাজারের মালদ্বীপ' বলে পরিচিত করেছে। বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে সেন্ট মার্টিনের অবদান ২০%, যা বার্ষিক ৫ লক্ষ পর্যটক আকর্ষণ করে।
দ্বীপের ইতিহাস: ১৯৭০-এর দশকে আবিষ্কৃত, ১৯৮০-এর দশকে পর্যটন শুরু। কিন্তু অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে – প্রবাল মৃত্যু, প্লাস্টিক দূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালে দ্বীপ ৯ মাস বন্ধ রাখা হয়েছে পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য। ২০২৫-এর নতুন নিয়ম এই ক্ষতি পূরণ করার লক্ষ্যে। দ্বীপের সৌন্দর্য: চেরা দ্বীপ, ইনানী সমুদ্রতীর, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, এবং স্থানীয় আরাকানদের সংস্কৃতি।
কেন ৩ মাসের জন্য? আসলে মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি (৪ মাস), কিন্তু নভেম্বরে কোনো রাতের থাকা, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সীমিত, ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ – পরিবেশ রক্ষায়। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড অনুসারে, এটি টেকসই পর্যটনের অংশ।
২০২৫-এর নতুন নিয়ম: ১২টি নির্দেশনা বিস্তারিত
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ২২ অক্টোবর ২০২৫-এর প্রজ্ঞাপন অনুসারে, 'সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩'-এর ভিত্তিতে ১২টি নির্দেশনা:
| নির্দেশনা নং | বিবরণ | কেন গুরুত্বপূর্ণ |
|---|---|---|
| ১ | বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলাচল নয়। | নিরাপত্তা এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ। |
| ২ | অনলাইন টিকিট (বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পোর্টাল থেকে), ট্রাভেল পাস + QR কোড সহ। QR ছাড়া অবৈধ। | নকল টিকিট রোধ, পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। |
| ৩ | নভেম্বরে দিনের বেলায় ভ্রমণ, রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ। | জীববৈচিত্র্য রক্ষা (রাতের দূষণ কম)। |
| ৪ | ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সীমিত রাত্রিযাপন (অনুমোদিত হোটেলে)। | পর্যটন বাড়ানো কিন্তু নিয়ন্ত্রিত। |
| ৫ | ফেব্রুয়ারির পর বন্ধ। | মৌসুমী সুরক্ষা। |
| ৬ | প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০০০ পর্যটক। | ওভারক্রাউডিং রোধ। |
| ৭ | পলিথিন নিষিদ্ধ, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিরুৎসাহিত। | দূষণ কমানো। |
| ৮ | নিজস্ব ফ্লাস্ক সাথে নিন, ছোট প্যাকেট বোতল নিষিদ্ধ। | প্লাস্টিক ফ্রি দ্বীপ। |
| ৯ | কোনো নৌযান ইনানী থেকে চলাচল নয়, শুধু নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে। | ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। |
| ১০ | পরিবেশবান্ধব হোটেলে থাকুন, বায়োডিগ্রেডেবল প্রোডাক্ট ব্যবহার। | টেকসই পর্যটন। |
| ১১ | জীববৈচিত্র্য ক্ষতি করা নিষিদ্ধ (কোরাল স্পর্শ নয়)। | প্রবাল রক্ষা। |
| ১২ | লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা/বন্ধ। | আইন প্রয়োগ। |
পরিবেশ মন্ত্রণালয় অনুসারে, এই নিয়ম ২০২৩ নির্দেশিকার উন্নয়ন। QR কোড টিকিটের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পোর্টাল ব্যবহার করুন।
কেন খুলছে মাত্র ৩-৪ মাস? পরিবেশ রক্ষার পটভূমি
সেন্ট মার্টিন ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ হয়েছে অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে। প্রতিদিন ৫০০০+ পর্যটকের চাপে প্রবাল ৩০% ক্ষতিগ্রস্ত, প্লাস্টিক দূষণ ২০০ টন/বছর, এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস (মাছের প্রজাতি ২০% কম)। পরিবেশ অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুসারে, বন্ধকালে পুনরুদ্ধার হয়েছে ১৫% প্রবাল। নতুন নিয়ম টেকসই পর্যটনের জন্য – মৌসুমী খোলা (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) যাতে ঝড়ের ঝুঁকি কম। নভেম্বরে রাতের থাকা নিষিদ্ধ কারণ রাতের আলো দূষণ সমুদ্রজীবকে প্রভাবিত করে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সীমিত (৫০০/রাত) অনুমোদিত হোটেলে। এটি UNESCO-এর টেকসই পর্যটন গাইডলাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কীভাবে যাবেন? ধাপে ধাপে ভ্রমণ গাইড ২০২৫
ধাপ ১: অনলাইন টিকিট এবং QR কোড
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েব পোর্টাল থেকে বুক করুন। খরচ: প্রাপ্তবয়স্ক ৫০০ টাকা, শিশু ২৫০ টাকা। ট্রাভেল পাস + QR কোড পাবেন। ঘাটে স্ক্যান করে প্রবেশ।
ধাপ ২: যাতায়াত
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার: বিমান (৫০০০-৮০০০ টাকা, ৫৫ মিনিট) বা বাস (১০০০-১৫০০ টাকা, ১০ ঘণ্টা)।
- কক্সবাজার থেকে টেকনাফ: সিএনজি/ট্যাক্সি (৫০০ টাকা, ৪ ঘণ্টা)।
- টেকনাফ থেকে দ্বীপ: জাহাজ (নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে, ২ ঘণ্টা, ২০০-৩০০ টাকা)।
ধাপ ৩: দ্বীপে থাকা
নভেম্বরে দিনভ্রমণ (সকাল ৮টা-বিকেল ৪টা)। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অনুমোদিত হোটেল (কোরাল ব্লু, পান্না রিসোর্ট, ২০০০-৫০০০ টাকা/রাত)।
ধাপ ৪: কী দেখবেন?
চেরা দ্বীপ, কাঙ্ক্সন, ইনানী, সূর্যোদয়, স্থানীয় বাজার। স্নরকেলিং (৫০০ টাকা)।
খরচের হিসাব: ২০২৫-এর বাজেট প্ল্যান
| খাত | খরচ (টাকা, ২ জনের) | টিপস |
|---|---|---|
| ঢাকা-কক্সবাজার | ১০,০০০ | অ্যাডভান্স বুকিং। |
| কক্সবাজার-টেকনাফ | ১,০০০ | শেয়ার্ড সিএনজি। |
| জাহাজ + টিকিট | ২,০০০ | QR সহ। |
| থাকা (২ রাত) | ৮,০০০ | অফ-সিজনে ছাড়। |
| খাবার | ২,০০০ | স্থানীয় সীফুড। |
| অন্যান্য (স্নরকেলিং) | ১,০০০ | মোট: ২৪,০০০ |
সোর্স: ভ্রমণ গাইড।
পরিবেশ রক্ষার টিপস: টেকসই ভ্রমণ করুন
- প্লাস্টিক এড়ান, ফ্লাস্ক নিন।
- প্রবাল স্পর্শ করবেন না।
- স্থানীয়দের সম্মান করুন।
- গার্বেজ নিজেরা নিন।
উপসংহার
সেন্ট মার্টিন খুলছে, কিন্তু মাত্র ৩ মাসের জন্য – এই নতুন নিয়ম পরিবেশ রক্ষায় অপরিহার্য। QR কোড টিকিট এবং রাতের থাকার শর্ত মেনে টেকসই ভ্রমণ করুন। এই দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করুন কিন্তু রক্ষা করুন। আরও তথ্যের জন্য অফিসিয়াল সাইট চেক করুন।
প্রশ্ন-উত্তর সেকশন
১. সেন্ট মার্টিন কবে খুলছে?
উত্তর: ১ নভেম্বর ২০২৫।
২. রাতের থাকা কবে সম্ভব?
উত্তর: ডিসেম্বর-জানুয়ারি, সীমিত।
৩. টিকিট কীভাবে কাটব?
উত্তর: অনলাইনে BTB পোর্টাল থেকে, QR সহ।
৪. খরচ কত?
উত্তর: ২ জনের ২৪,০০০ টাকা।
৫. কেন নিয়ম কঠোর?
উত্তর: পরিবেশ রক্ষার জন্য।

